তাবেলা হত্যার ৮ বছর: সাক্ষীতে আটকা বিচার
 
                                আট বছর আগে রাজধানীর গুলশানে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইসিসিও-বিডি’র কর্মকর্তা তাবেলা সিজার। হত্যাকাণ্ডের এক বছর পর সাত আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরু আদেশ দেন আদালত। সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে সাত বছর পার হলেও মামলার বাদী আইসিসিও’র কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ হেলেন ভেন ডার বিকের এখনো সাক্ষ্য হয়নি।
এভাবে বছরের পর বছর পার হলেও আলোচিত এ হত্যা মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে ঝুলে রয়েছে।মামলায় মোট ৭০ জন সাক্ষীর মধ্যে সাত বছরে ৪০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, চলতি বছরে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করা হবে। আগামী বছরের প্রথম দিকে মামলার রায় ঘোষণা করা হবে বলে আশাবাদী রাষ্ট্রপক্ষ।
আলোচিত মামলাটি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামানের আদালতে বিচারাধীন। বর্তমানে মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। এ মামলার দ্বিতীয় তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) জেহাদ হোসেনের জেরা অব্যাহত রয়েছে। সর্বশেষ গত ২১ সেপ্টেম্বর এ মামলার জেরার জন্য দিন ধার্য ছিল। তবে বিচারক ছুটিতে থাকায় সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি। পরে আদালত এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ২৫ অক্টোবর দিন ধার্য করেন।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল বলেন, ইতালির নাগরিক তাবেলা সিজার হত্যা মামলাটিতে তদন্ত কর্মকর্তার জেরার জন্য দিন ধার্য রয়েছে। এবছরের মধ্যে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করা হবে। আগামী বছরের প্রথম দিকে মামলাটির রায় ঘোষণা হবে বলে আশা করছি।
আসামি মতিনের আইনজীবী সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, তাবেলা সিজারের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আসামি মতিনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাকে গ্রেফতার করে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় আবেদন করেছিলেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। তিনি জবানবন্দি দেননি। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। উচ্চ আদালত থেকে তিনি জামিন নেন। বর্তমানে তিনি আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে প্রতিটি ধার্য তারিখে আদালতে উপস্থিত হয়ে হাজিরা দিচ্ছেন। এ মামলার এজাহারের সঙ্গে চার্জশিটের কোনো মিল নেই। এ পর্যন্ত কোনো সাক্ষী মতিনের নামও বলেননি। আদালত নিরপেক্ষভাবে বিবেচনা করলে আসামি মতিন খালাস পাবেন বলে আশা করছি।
২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গুলশান-২ এর ৯০ নম্বর সড়কে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন আইসিসিও-বিডি’র কর্মকর্তা তাবেলা সিজার। এ ঘটনায় একই দিন তার সহযোগী আইসিসিও’র কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ হেলেন ভেন ডার বিক বাদী হয়ে গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ হত্যা মামলার ২০১৬ সালের ২২ জুন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পরিদর্শক গোলাম রাব্বানী সাতজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। পরে একই বছরের ২৫ অক্টোবর সাত আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। সোহেলের পিস্তল ভাড়া করে তাবেলা সিজারকে হত্যা
মামলার চার্জশিটে বলা হয়, ‘আসামি সোহেলের কাছ থেকে পিস্তল ভাড়া নিয়ে খুনিরা তাবেলা সিজারকে হত্যা করেন। মতিনের নির্দেশে ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর শাখাওয়াতের মোটরসাইকেল নিয়ে মিনহাজুল, তামজিদ ও রাসেল চৌধুরী গুলশান ২-এর ৯০ নম্বর সড়কে যান। ওই সড়কের গভর্নর হাউজের সীমানা প্রাচীরের বাইরে ফুটপাতে নিরিবিলি ও অন্ধকার স্থানে তামজিদ গুলি করে তাবেলা সিজারকে (৫১) হত্যা করেন। তাকে সহায়তা করেন রাসেল চৌধুরী ও মিনহাজুল। হামলাকারীদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল একজন শ্বেতাঙ্গকে হত্যা করে দেশ-বিদেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়া। দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে এই পরিকল্পনা করা হয়।’
এ মামলার আসামিরা হলেন- বিএনপি নেতা এমএ কাইয়ুম ওরফে কাইয়ুম কমিশনার ও তার ভাই আবদুল মতিন, তামজিদ আহমেদ ওরফে রুবেল ওরফে শুটার রুবেল, রাসেল চৌধুরী ওরফে চাক্কি রাসেল, মিনহাজুল আরেফিন রাসেল ওরফে ভাগনে রাসেল, শাখাওয়াত হোসেন ওরফে শরিফ ও মো. সোহেল ওরফে ভাঙারী সোহেল। আসামিদের মধ্যে কাইয়ুম কমিশনার ও ভাঙারী সোহেল এখনো পলাতক। আসামি আবদুল মতিন জামিনে রয়েছেন। এছাড়া অপর চার আসামি তামজিদ, রাসেল, মিনহাজুল ও শাখাওয়াত কারাগারে আটক রয়েছেন। তারা হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।


-2021-08-29-21-21-25.gif)
 
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                    
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: