রাজধানীর পল্লবীতে শাহিন হত্যা

সাহিনুদ্দীনকে খুন করতে ২০ হাজার টাকা দেন এমপি আউয়াল

হাত-পা কাটতে আসামিদের ২০ হাজার টাকা দেন আউয়াল

রাজধানীর আলীনগর আবাসিক প্রকল্পের পিলার ভাঙায় পল্লবীতে সাহিনুদ্দিনকে হত্যার নির্দেশ দেন লক্ষ্মীপুর-১  আসনের সাবেক এমপি ও ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান এম এ আউয়াল। সাহিনুদ্দিনের হাত পা কেটে ফেলার জন্য আসামিদের ২০ হাজার টাকা দেন আউয়াল। এ ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় গতকাল রবিবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখায় আউয়ালসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর পরিদর্শক মনির হোসেন। চার্জশিটে এসব কথা উল্লেখ করেন তদন্ত কর্মকর্তা।

রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) পল্লবী থানার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখায় এ সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পুলিশের পরিদর্শক মনির হোসেন। আগামী ১২ অক্টোবর শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত।

আদালতে দাখিল করা চার্জশিট সূত্রে জানা গেছে, ব্যবসায়ী শাহিন উদ্দিনের হাত-পা কেটে ফেলার জন্য প্রাথমিক খরচ বাবদ আসামি সুমন বেপারীকে ২০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন এম এ আউয়াল। এরপর আসামি সুমন ও টিটি শেখ ওরফে টিটু হত্যার বিষয়ে আলোচনা করেন। পরে অন্য আসামিদের সহযোগিতায় শাহিনকে তার সাত বছর বয়সী সন্তানের সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পুলিশের পরিদর্শক মনির হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, পল্লবীতে শাহিন উদ্দিন হত্যা মামলায় তদন্তে সত্যতা পেয়ে সাবেক এমপি এম এ আউয়ালসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেছি।

এম এ আউয়াল ছাড়াও চার্জশিটভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন তাহের, সুমন বেপারী, মুরাদ, টিটি শেখ ওরফে টিটু, গোলাম কিবরিয়া খান, ইব্রাহিম সুমন ওরফে বাওয়া সুমন, শফিকুল ইসলাম ওরফে শফিক, রকি তালুকদার ওরফে রকি, নুর মোহাম্মদ হাসান মোতাইত, ইকবাল হোসেন ওরফে ইতবাল নুর, শরিফ, তৌরিকুল ইসলাম ওরফে ইমন, তুহিন মিয়া, হারুন অর রশীদ ওরফে হারুন ও প্রতীক আহম্মেদ সজীব।

মামলার বাদী আকলিমা বেগম বলেন, আইন চলে টাকা-পয়সার ওপর। আমার ছেলের সঙ্গে আমাদের আত্মীয় মনোয়ার হোসেন সুমনের ভেজাল ছিল। সে তাকে হত্যা করিয়েছে। ডিবি ও পিবিআইকে তার (সুমনের) নাম যুক্ত করার জন্য বলেছিলাম। তারা সেটা করেনি। আসামিরা আমাদের এখনো হুমকি দিচ্ছেন। বাড়িঘর ভাঙচুর করছেন। আমরা এখনো নিরাপদ নই। পিবিআই যে চার্জশিটটা দিয়েছে তার বিরুদ্ধে নারাজি দেবো।

প্রকল্পের পিলার ভাঙায় শাহিনের ওপর রেগে যান এমপি আউয়াল

মামলার চার্জশিটে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, রাজধানীর মিরপুরে আলীনগর আবাসিক প্রকল্পের পিলার ভেঙে ফেলায় এম এ আওয়াল ভিকটিম শাহিনের ওপর ক্ষুব্ধ হন। এরপর তার কোম্পানির পিডি আসামি মোহাম্মদ তাহেরকে দিয়ে মাইনুউদ্দিন ও শাহিনের নামে ২০২১ সালের ২৭ এপ্রিল পল্লবী থানায় মামলা করান। পুলিশ ওই মামলায় মাইনুউদ্দিন ও শাহিনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায়। শাহিন কারাগারে থাকা অবস্থায় তার স্ত্রীর বড় ভাই জহির হাভেলি প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের পক্ষে আসামি সুমন বেপারী ও টিটুকে সঙ্গে নিয়ে মেজর (অব.) মোস্তফা কামালের জমির অর্ধেক বাউন্ডারি দেওয়াল ভেঙে ফেলে। শাহিন ও মাইনুউদ্দিন বেশ কিছুদিন পর জেল থেকে জামিনে বের হয়ে ফের ওই আবাসিক প্রকল্পের ১০ কাঠা জমির বাউন্ডারি দেওয়াল ভেঙে ফেলেন। ফলে পিএস সজীব কোম্পানির হয়ে সুমন ও টিটুকে অফিসে যেতে বলে। ঈদের ২/৩ দিন আগে আসামি এম এ আওয়ালের অফিসে বেতন আনতে যান সুমন ও টিটু। সেখানে আসামি মোহাম্মদ তাহের, সাইট ম্যানেজার গোলাম কিবরিয়া খান, জহির ও সজীবদের আওয়ালের রুমে একসঙ্গে বসা অবস্থায় দেখতে পান শাহিন। এসময় এমএ আওয়াল উপস্থিত থেকে সুমন, টিটু এবং শাহিনের মধ্যে বিরোধের বিষয়টি সবার উপস্থিতিতে মীমাংসা করে দেন। পরে ঈদের বেতন-ভাতা বাবদ কোম্পানির পক্ষে সবাইকে টাকা দেন সজীব।

পিবিআইয়ের চার্জশিটে বলা হয়েছে, শাহিনের হাত-পা কেটে ফেলার জন্য খরচ বাবদ সজীবের মাধ্যমে সুমনকে ২০ হাজার টাকা দেন আওয়াল। সুমন ও টিটু অফিস থেকে বের হয়ে শাহিনকে হত্যার বিষয়ে আলোচনা করেন। তখন ইটের টাকা নিতে শাহিনকে ডাকার জন্য সুমনকে পরামর্শ দেন টিটু। সে মোতাবেক ঘটনার দিন অর্থাৎ ১৬ মে সকালে সুমন হত্যা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে লোকজন ঠিক করেন। আসামি মানিক, মুরাদ, ইকবাল হোসেন, নূর মোহাম্মদ হাসান মোতাইত ও রকিকে মোবাইল ফোনে ডেকে আনেন। শাহিনকে হত্যার জন্য সুমন মোবাইল ফোনে রকিকে ৩/৪ জন লোক দিতে বলেন। রকি তখন বাউনিয়াবাদের আসামি শফিককে ৩/৪ জন লোক জোগাড় করে দিতে বলেন। সে অনুযায়ী শফিক দুপুর ১২টার দিকে আসামি শরিফ ইমন, তুহিন ও হারুনদের নিয়ে লালডেক ঈদগাহ মাঠে রকির সঙ্গে দেখা করতে বলেন। শফিকের কথামত শরীফ তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে প্রথমে ইমনকে ফোন করে দেখা করতে বলেন। এরপর আসামি ইমন দুপুর আনুমানিক আড়াইটার দিকে লালমাটিয়া ৩ নম্বর রোডে শরীফের সঙ্গে দেখা করেন। সেখানে শরীফের সঙ্গে শফিকও উপস্থিত ছিলেন। শফিক আসামি হারুন ও তুহিনদের সঙ্গে নিয়ে লালডেক ঈদগাহ মাঠে দেখা করতে বলে সেখান থেকে চলে যান।

এরপর আসামি শরীফ ও ইমন মিলে আসামি হারুনের বাসায় যান। তার আগে শরীফ তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে হারুনকে ঘর হতে বের হতে বলেন। হারুন ঘর হতে বের হলে শরীফ, ইমন ও হারুন মিলে লালডেক ঈদগাহ মাঠে যান। এরপর ইমনের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তুহিনকে দ্রুত লালডেক ঈদগাহ মাঠে আসতে বলেন শরীফ। তুহিন তখন মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় ছিলেন। তুহিন লালডেক ঈদগাহ মাঠে পৌঁছালে সেখানে তার বন্ধু শরীফ, ইমন, হারুন, শফিক ও রকিদের দেখতে পান। এরপর শফিক তাদের রকির সঙ্গে যেতে বলেন। তখন তারা রকির সঙ্গে পল্লবী থানাধীন সেকশন ১২, ব্লক-ডি, ৩১ নম্বর রোডে যায়। সেখানে গিয়ে রকি সুমনের সঙ্গে দেখা করলে সুমন তাদের চায়ের দোকানে বসতে বলেন। রকি তার সঙ্গে থাকা আসামিদের সুমনের কাছে বুঝিয়ে দিয়ে চলে যান। রকি চলে যাওয়ার আগে সুমনের কাছে এ কাজ বাবদ ১০ হাজার টাকা চান। সুমনও টাকা দিতে রাজি হন।

যে লোকটার পিঠে হাত দেবো তাকে কোপাতে হবে
মামলার চার্জশিটে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, আসামি সুমন চায়ের দোকানে বসে থাকা চারজনের মধ্যে আসামি তুহিনকে ডেকে নিয়ে কথা বলেন এবং সঙ্গে কিছু এনেছে কি না জিজ্ঞেস করেন। তুহিন ‘কিছু নাই’ জানালে শরীফ, ইমন, হারুন, তুহিনদের চায়ের দোকানে অপেক্ষা করতে বলেন সুমন। কিছুক্ষণ পর সুমন তাদের ডেকে ৩১ নম্বর রোডে নিয়ে যান। এরপর আসামী শরীফ ও হারুনকে ৪০ নম্বর বাড়ির কোণায় এবং আসামি ইমন ও তুহিনকে ৪০ নম্বর বাডড়ির বিপরীত পাশের রাস্তায় দাঁড় করিয়ে দেন সুমন। এসময় তিনি শরীফের হাতে একটি রাম দা, হারুনের হাতে একটি দা, তুহিনের হাতে একটি বড় ছুরি ও ইমনের হাতে একটি রাম দা তুলে দেন। সুমন তাদের বলেন, তার কাছে একজন লোক আসবে। তিনি যে লোকটার পিঠে হাত দেবেন সে লোকটাকে কোপাতে হবে। তার কথামতো সবাই যার যার অবস্থান নেন এবং হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র লুকিয়ে রাখেন। আসামি টিটু তখন ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থাকলেও তার কথামতো সুমন সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে এ হত্যা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন।

শাহিনের ছেলে মাশরাফিকে চিপস খেতে ১০ টাকা দেন সুমন

চার্জশিটে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ঘটনার দিন বিকেল ৪টার দিকে আসামি টিটুর পরামর্শ অনুযায়ী সুমন মোবাইল ফোনে ভিকটিম শাহিনকে ইটের টাকা নিতে ৩১ নম্বর রোডের ৪০ নম্বর বাসার সামনে আসতে বলেন। সুমন তখন আসামি মুরাদ, মানিক, শরীফ, তুহিন, হারুন, ইমন, নূর মোহাম্মদ হাসান মোতাইত, ইকবাল হোসেন ও মনিরদের ৩১ নম্বর রোডের আশপাশে সুবিধাজনক জায়গায় অবস্থান নেওয়ার নির্দেশ দেন। নির্দেশ মোতাবেক সবাই যার যার অবস্থানে থেকে শাহিনের আসার অপেক্ষায় ওঁত পেতে থাকেন। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শাহিন তার ছেলে মাশরাফিকে সঙ্গে নিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। তখন ৪০ নম্বর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে সুমন মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। তখন আসামী সুমন বেপারী ভিকটিম সাহিদুদ্দিনের ছেলে মাশরাফিকে মোটরসাইকেল হতে কোলে করে নিচে নামিয়ে তাকে চিপস খাওয়ার জন্য ১০ টাকা দেয়। এরপর কিছুটা এগিয়ে গিয়ে সুমন কথা বলতে বলতে শাহিনের কাঁধে হাত রেখে অন্য আসামিদের ইশারা করলে আসামি তুহিন ও ইমন রাস্তার বিপরীত পাশ থেকে সেখানে এসে হাজির হন। তখন শাহিনের পেছন দিক থেকে তুহিন তার ডান হাতে থাকা বড় ছুরি দিয়ে, এরপর ইমন তার ডান হাতে থাকা রামদা দিয়ে শাহিনের বাম পায়ে কোপ দেন।

কোপ খেয়ে মোটরসাইকেল থেকে মাটিতে পড়ে যান শাহিন

চার্জশেটে উল্লেখ করা হয়, কোপ খেয়ে ভিকটিম শাহিন মোটরসাইকেল থেকে মাটিতে পড়ে যান এবং আত্মরক্ষার জন্য ৪০ নম্বর বাড়ির গ্যারেজের ভেতর ঢুকে পড়েন। সেখানে আগে থেকে ওঁত পেতে ছিলেন আসামি মানিক ও মুরাদ। শাহিন গ্যারেজে ঢোকার পর সুমন সেখানে যান। এসময় মুরাদ তার হাতে থাকা চাপাতি দিয়ে, মানিক তার হাতে থাকা বড় ছুরি দিয়ে এবং সুমন তার ডান হাতে থাকা রামদা দিয়ে গ্যারেজের ভেতর শাহিনের ডান হাতে, ডান পায়ে ও বুকে কোপাতে থাকেন। প্রাণে বাঁচতে শাহিন চিৎকার করতে করতে গ্যারেজের ভেতর থেকে বের হয়ে আসেন।

তখন আসামি মোহাম্মদ হাসান মোতাহত, ইকবাল হোসেন ও মনির দৌড়ে ৪০ নম্বর বাসার সামনে চলে যান এবং আসামিরা মিলে শাহিনকে ঘিরে ফেলেন। এরপর সবাই যার যার হাতে থাকা অস্ত্র দিয়ে শাহিনকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন। এসময় ৩৬ নম্বর বাড়ির সামনে নিস্তেজ হয়ে মাটিতে পড়ে যান শাহিন। তখন সুমন রাম দা দিয়ে মাটিতে পড়ে থাকা ভিকটিমের মাথায় সজোরে কোপ দেন। আসামি মনির দুই হাতে বড় ছুরি ধরে শাহিনের ঘাড়ে, মাথার পেছনে ও ডান হাতে কোপান এবং আসামি মানিক দুই হাত দিয়ে বড় ছুরি ধরে শাহিনের বাম হাঁটু থেকে বাম পায়ের পাতাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কুপিয়ে তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন।

২০২২ সালের ১২ মে আদালত শাহিন উদ্দিনের মায়ের নারাজির আবেদন গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে পিবিআইকে মামলাটি পুনরায় তদন্ত করে প্রতিবেদন জমার নির্দেশ দেন। এর আগে ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে এ মামলায় এম এ আউয়ালসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক সৈয়দ ইফতেখার হোসেন।

অন্য আসামিরা হলেন, সুমন ব্যাপারী, টিটু, কিবরিয়া, মুরাদ হোসেন, আবু তাহের, ইব্রাহিম সুমন, রকি তালুকদার, শফিকুল ইসলাম, তুহিন মিয়া, হারুন অর রশীদ, তারিকুল ইসলাম, নুর মোহাম্মদ, হাসান ও ইকবাল হোসেন। সুমন ও শফিকুল ছাড়া বাকি ১৩ আসামি কারাগারে। তাদের মধ্যে ৯ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

২০২১ সালের ১১ মে আকলিমা নামের এক নারী পল্লবী থানায় সুমন বাহিনীর সুমনসহ ছয়জনকে আসামি করে জিডি করেন। জিডিতে সুমন ছাড়া আরও পাঁচজনকে আসামি করা হয়। তাদের মধ্যে হ্যাভিলি প্রপার্টিজের স্বত্বাধিকারী ও সাবেক এমপি এমএ আউয়ালও আছেন। জিডিতে আকলিমা আশঙ্কা করেন, যে কোনো সময় তার ছেলে সাহিনুদ্দিনকে হত্যা করা হতে পারে। এই আশঙ্কার পাঁচদিনের মাথায় ১৬ মে প্রকাশ্য দিবালোকে নৃশংসভাবে সাহিনুদ্দিনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

২০২১ সালের ১৬ মে শাহিন উদ্দিন হত্যাকাণ্ডের পর ওই রাতেই নিহতের মা আকলিমা বেগম বাদী হয়ে পল্লবী থানায় সাবেক এমপি আউয়ালসহ ২০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। মামলায় এম এ আউয়ালকে প্রধান আসামি করা হয়। এছাড়া অন্য আসামিরা হলেন, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সুমন, মো. আবু তাহের, মুরাদ, মানিক, মনির, শফিক, টিটু, কামরুল, কিবরিয়া, দিপু, আবদুর রাজ্জাক, মরন আলী, লিটন, আবুল, বাইট্যা বাবু, বড় শফিক, কালু ওরফে কালা বাবু, নাটা সুমন ও ইয়াবা বাবু।

মামলার এজাহারে আকলিমা বেগম বলেন, ২০২১ সালের ১৬ মে বিকেল ৪টার দিকে সুমন ও টিটু নামের দুই যুবক শাহিনকে জমির বিরোধ মেটানোর কথা বলে ফোন করে ডেকে নেন। শাহিন মোটরসাইকেলে পল্লবীর ডি-ব্লকের ৩১ নম্বর সড়কের ৪০ নম্বর বাসার সামনে গেলে সুমন ও টিটুসহ ১৪-১৫ জন মিলে তাকে টেনেহিঁচড়ে ওই বাড়ির গ্যারেজে নিয়ে যান।

এসময় শাহিনের ছয় বছর বয়সী ছেলে মাশরাফি বাসার গেটের বাইরে ছিল। গ্যারেজে নিয়ে শাহিনকে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকেন আসামিরা। এরপর তাকে ওই গ্যারেজ থেকে বের করে ৩৬ নম্বর বাড়ির সামনে এনে আবার কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে ফেলে রেখে চলে যান। ঘটনাস্থলেই শাহিনের মৃত্যু হয়।

জামিনে সাবেক এমপি আউয়াল , আতঙ্কে সাহিনুদ্দীনের পরিবার 

রাজধানীর পল্লবীতে প্রকাশ্যে কুপিয়ে সাহিনুদ্দীন হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাবেক এমপি আউয়াল জামিনে আছেন। ফলে সাহিনুদ্দীনের পরিবারসহ এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক আছেন। তাদের আশঙ্কা, যে কোনো সময় উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে পল্লবীর আলীনগর এলাকা।

নিহত সাহিনুদ্দীনের মা মোসাম্মৎ আকলিমা বলেন, এমপি আউয়াল জামিনে আছে । তারা নাকি এখন আমার ছোট ছেলেকে হত্যার পরিকল্পনা করছে। আমি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, আপনারা তাকে নজরে রাখেন। না হলে তিনি ও তার লোকজন আমার আবারও ক্ষতি করবে।

তিনি বলেন, একজন হত্যা মামলার আসামি জামিনে বেরিয়ে এলাকায় মহড়া দেয়, এটা বড় লজ্জার। এই রকম হলে বিচার পাওয়া নিয়ে আমার শঙ্কা। তার এই মহড়ায় আমরা আতঙ্কিত। আমার বড় ছেলের ওপর যেকোনো সময় তার লোকজন হামলা করতে পারে। আমরা এখন ভয়ে দিন কাটাচ্ছি।




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top