চলে যাওয়ার ১৩ বছর
হুমায়ূন আহমেদ: সৃষ্টির মাঝে বেঁচে থাকা নাম

আজ ১৩ বছর পূর্ণ হলো বাংলা সাহিত্য ও জনপ্রিয় সংস্কৃতির কিংবদন্তি হুমায়ূন আহমেদের পৃথিবী থেকে চলে যাওয়ার। ২০১২ সালের এই দিনে নিউইয়র্কের একটি হাসপাতালে মাত্র ৬৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। কিন্তু তার সৃষ্টিকর্ম আজও কোটি বাঙালির হৃদয়ে অমলিন।
যেভাবে শুরু, যেভাবে বাঙালির প্রিয় লেখক হয়ে উঠলেন:
হুমায়ূন আহমেদ (১৯৪৮-২০১২) শুধু একজন লেখক ছিলেন না, ছিলেন একজন গল্পকার, নাট্যকার, চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। ১৯৭২ সালে "নন্দিত নরকে" দিয়ে সাহিত্য জগতে আত্মপ্রকাশ করলেও "মধ্যাহ্ন", "দেয়াল", "শঙ্খনীল কারাগার", "জোছনা ও জননীর গল্প"—এমন অসংখ্য উপন্যাস তাকে বাঙালির হৃদয়ের গভীরে পৌঁছে দেয়।
তার লেখার ভাষা ছিল সহজ, প্রাণবন্ত এবং গভীরভাবে মানবিক। মিসির আলি, হিমু বা শুভ্রের মতো কালজয়ী চরিত্রগুলো আজও পাঠকদের মনে জাগিয়ে তোলে রহস্য, দর্শন ও আবেগের মিশেল। কিশোর বয়সে যারা প্রথম হুমায়ূন আহমেদের লেখা দিয়ে সাহিত্যে পা রাখে তারা সবাই কখনো না কখনো হিমু কিংবা রূপা হতে চায়।
টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে বিপ্লব:
হুমায়ূন আহমেদ শুধু বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ থাকেননি, টেলিভিশন নাটক ও চলচ্চিত্রেও এনেছিলেন নতুন ধারা। "এইসব দিনরাত্রি","বহুব্রীহি","কোথাও কেউ নেই"(বাকের ভাই এপিসোড)-এর মতো নাটকগুলো আজও স্মরণীয়। অন্যদিকে, "শ্রাবণ মেঘের দিন","দুই দুয়ারি","ঘেটুপুত্র কমলা”—এসব চলচ্চিত্র বাংলা সিনেমাকে দিয়েছে নতুন মাত্রা।
মৃত্যু ও একটি শূন্যতা:
ক্যান্সারের সাথে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর ২০১২ সালের ১৯ জুলাই তিনি না ফেরার দেশে চলে যান। তার মৃত্যু শুধু একজন লেখকের প্রস্থান নয়, একটি যুগের অবসান। আজও তার অনুপস্থিতি আমরা গভীরভাবে অনুভব করি।
সাহিত্যে সহজ ভাষায় গভীর দর্শন– তার লেখা যেকোনো বয়সের পাঠককে স্পর্শ করে। চরিত্র সৃষ্টির অসাধারণ ক্ষমতা– হিমু, মিসির আলি, বাকের ভাই আজও জীবন্ত। সংস্কৃতির বহুমুখী অবদান– তিনি বই, নাটক, সিনেমা সবক্ষেত্রেই সমানভাবে সফল। এসব কারণে আজও হুমায়ূন আহমেদ প্রাসঙ্গিক।
হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যু বার্ষিকী শুধু শোকের নয়, গর্বেরও। কারণ, তিনি চলে গেলেও রেখে গেছেন অমর সব সৃষ্টি। আজও যখন কেউ "নন্দিত নরকে" পড়ে, শ্রাবণ মেঘের দিন"দেখে বা হিমুর গল্প শোনে, তখনই তিনি ফিরে আসেন বাঙালির মনের কোণে।
“ পৃথিবীতে ফিনিক ফোটা জোছনা আসবে।
শ্রাবণ মাসে টিনের চালে বৃষ্টির সেতার বাজবে।
সেই অলৌকিক সঙ্গীত শোনার জন্য আমি থাকব না।
কোনো মানে হয়…” না কোনো মানে হয় না তাও সবকিছু ছেড়ে চলে গেলেন। চির গন্তব্যের দিকে চলে যাওয়ার আগে আমাদের জন্য রেখে গেলেন তার সকল সৃষ্টিকর্ম। আমরা তার সৃষ্টির মাঝেই তাঁকে বাঁচিয়ে রাখবো।
আমির হোসেন
শিক্ষার্থী,
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ,
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: