স্কুলের জমি দখল করে আওয়ামী লীগ নেতার ব্যবসা বাণিজ্য

অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন তালুকদার

প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ বিদ্যালয়ের জায়গা দখল করে ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান তৈরি করার অভিযোগ উঠেছে ডগ্রী ইসমাইল হোসেন স্কুল এ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন তালুকদারের বিরুদ্ধে।
প্রধানমন্ত্রীর দফতরে এই বিষয়ে বিশাল অভিযোগ জমা পড়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সেই অভিযোগ গ্রহণ করেছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, দেলোয়ার তালুকদার নড়িয়া থানাধীন ৮৮নং ডগ্রী মাদবরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোট ৪০ শতাংশ সরকারী জমির মধ্যে দীর্ঘকাল যাবৎ ২০ শতাংশ জমির ওপর পাকা ভবন নির্মান পূর্বক মার্কেট তৈরি করে ভাড়া প্রধান করে লক্ষ লক্ষ টাকা অন্যায়ভাবে উপার্জন করছেন।

এমন কী, স্কুলের জমির থেকে আয়ের টাকা স্কুল ফান্ডে কোনদিন জমা দেয়নি। লক্ষ লক্ষ টাকা স্কুলের আয় হলেও স্কুল ফান্ডে কোন টাকার অস্তিত্ব নেই। নেই স্কুলের নামে কোন স্বীকৃত ব্যাংক এ্যাকাউন্ট। বিদ্যালয়ের রেকর্ডপত্র, নড়িয়া থানার ভূমি অফিসে খোঁজ নিলেই দেখা যাবে কত জমি স্কুলের নামে। আর কত অংশ তিনি ভোগ করছেন।
অভিযোগ আছে, স্কুলের জমি দখল করে তিনি তৃতীয়তলা আবাসিক ভবন বানিয়েছেন। বাড়ির আশপাশে তালুকদার মার্কেট নামে মার্কেট তৈরি করেছেন।

যা পুরোপুরি স্কুলের সম্পদ। যাহার এসএ খতিয়ান নং ৭২, দাগ নং, ০৮, বর্তমান বিআরএস খতিয়ান নং ৪০০, দাগ নং, ১৮। স্কুলের সম্পদ লুটপাট করে ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সম্পদ গড়ে তুলেছেন। অভিযোগ বলছে, তিনি একজন স্কুলের প্রধান শিক্ষক, এরসাথে ছিলেন নশাসন ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান। অল্প আয়ের এই মানুষ শরীয়তপুর সদরে আধুনিক সিটি হাসপাতাল নামে একটি হাসপাতাল বানিয়েছেন। যার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তিনি।

অথচ ২০১৬ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের নির্বাচনী হলফ নামায় এসকল সম্পদের কিছুই উল্লেখ নেই। এত অর্থের মালিক তিনি কিভাবে হলেন? অভিযোগ আছে, দেশের বাইরেও তিনি অর্থ পাচার করেছেন। ডগ্রী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গা দখল অরে তিনি ২০টির বেশি পাকা দোকান বানিয়েছেন। যেখান থেকে তিনি হাজার হাজার টাকার ভাড়া উত্তোলন করেন।
স্থানীয় প্রতিনিধির পাঠানো সংবাদে জানা যায়, মাদবর বংশ নব্বই এর দশকে স্কুল তৈরির জন্য জমি দিয়েছিল। স্কুল নির্মাণের পর ধীরে ধীরে আরও জমি স্কুলের নামে লিখে দেওয়া হয়। সেই জমির একটা বড় অংশ নিজের নামে লিখিয়ে নিয়েছেন দেলোয়ার তালুকদার।


নাম প্রকাশ না করার শর্তে জমিদাতা একজন জানান, শরীয়রপুর ২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম শওকত আলীর বিশেষ অনুগত হওয়ায় প্রতিবাদ করতে পারেননি তারা। শওকত আলী সংসদ সদস্য থাকাকালীন সময়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব চালিয়েছেন দেলোয়ার তালুকদার। হত্যাচেষ্টা মামলা ও বেশ কয়েকটি অভিযোগ আছে নড়িয়া থানায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডগ্রী ইসমাইল হোসেন স্কুল এ্যান্ড কলেজের একজন শিক্ষক জানান, প্রধান শিক্ষক হলেও নিজেই তিনি নিজেকে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। ঠিকমত স্কুলে তিনি আসেন না। জেলা আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ায় কেউ কোন প্রতিবাদ করতে পারেন না।


শরীয়তপুর জেলার আওয়ামী লীগের সবশেষ কাউন্সিলে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে বাদ পড়েছেন দেলোয়ার তালুকদার। এখন জেলার সদস্য তিনি।
এই বিষয়ে শরীয়তপুর জেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি আনোয়ার কামাল বলেন, দেলোয়ার তালুকদার শিক্ষক সমিতির সদস্য না।
শরীয়তপুর জেলা শিক্ষা অফিসার মো.এমারত হোসেন মিয়া বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এমন কোন নির্দেশ দেয়া হলে তারা তদন্ত করে দেখবেন।
তার শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও ইতমধ্যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এমএ ডিগ্রীর সনদ জাল বলে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। যদিও দেলোয়ার তালুকদার দাবী করেছেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এসব অভিযোগ সামনে নিয়ে আসছে। এসকল সংবাদ প্রকাশ করা হলে এই প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দেন দেলোয়ার তালুকদার।


যদিও সার্টিফিকেট জালিয়াতির সত্যতা জানতে ২০১৫ সালের এক ডিসেম্বর স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি গোলাম হোসেন চোকদার দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষে কাছে একটি আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়টি জানিয়েছিল ইসলামিক স্টাডিজ এর এমএ ডিগ্রী নামে তাদের কোন কোর্স নেই। যেখানে এই বিষয় বিশ্ববিদ্যালয়টি পড়ায়নি তাদের এই বিষয়ের সনদ দেয়ার কোন প্রশ্নই আসে না। আর এমন কোন ডিগ্রীর অস্তিত্ব নেই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, ইউজিসিতে।


এমন বিতর্কিত একটি বিষয়ে যুক্ত থাকা ব্যক্তি কীভাবে শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে আছেন এই প্রশ্ন জেলা কমিটির সভাপতির কাছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছাবেদুর রহমান খোকা বলেন, জেলা কমিটি হওয়ার সময় এমন অভিযোগ তারা জানতেন না। এই অভিযোগের প্রমাণ পেলে দলীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে দেলোয়ার তালুকদারের বিরুদ্ধে। দুর্নীতি দমন কমিশন ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে দেলোয়ার তালুকদারের নামে অভিযোগ জমা পড়েছে।




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top