লালবাগে মূর্তিমান আতঙ্ক ফরমা বিল্লাল, গ্রেফতারের দাবীতে মানববন্ধন

লালবাগে মূর্তিমান আতঙ্ক ফরমা বিল্লাল, গ্রেফতারের দাবীতে মানববন্ধন

নাম মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন। কিন্তু সাধারণ জনগণের কাছে ফরমা বিল্লাল নামেই বেশ পরিচিত। লালবাগের সাধারণ জনগণের কাছে এখন সে এক আতঙ্কের নাম। চাহিদামত দাবি পূরণ না হলে, যে কাউকেই ফাঁসাতে পারে সে। শুধু তাই নয়, হত্যা-খুন-চাঁদাবাজিতেও পারদর্শী হয়ে উঠেছে এই ফর্মা বিল্লাল।

লালবাগের সাধারণ মানুষকে জোরপূর্বক হামলা-মামলা, হুমকি-ধামকি, ইয়াবা ব্যবসা, চাদাবাজী, দখলবাজীসহ এমন কোন কর্মকা- নেই যা করেন না সে। তার অত্যাচার এবং বিভিন্ন সময়ে করা প্রতারনায় এখন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী। এমন অবস্থায় তাকে দ্রুতই গ্রেফতার করে শাস্তির আওতায় আনার দাবী জানিয়ে মানবন্ধন করেছেন লালবাগবাসী।

মঙ্গলবার দুপুরে বেড়িবাধে অনুষ্ঠিত এই মানবন্ধনে অংশ নেন ভূক্তভোগী শত শত পরিবার।


ভূক্তভোগী ছাড়াও এসময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং তার অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত থেকে ফর্মা বিল্লালের শাস্তি এবং তাকে দ্রুতই আইনের আওতায় আনার আহব্বান জানান। মানবন্ধনে উপস্থিত থেকে এই প্রতারকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের অন্যতম সদস্য জিয়াউর রহমান কোয়েল। তিনি বলেন, ‘ফর্মার প্রতারণায় শত শত পরিবার পথে বসে গেছে। সে লালবাগের পুষ্পশা পুকুরপাড়, বাঁশপট্টি, বালুরঘাট, কয়লাঘাট, শহিদনগর ২ নম্বর গলি, শ্মশানঘাট, আইডিয়াল স্কুল, আনোয়ার হোসেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে, বালুরঘাট পাইপ কারখানা, চান্দা ব্যাটারির গলি, শহিদনগর ট্রাকস্ট্যান্ড, হক্কুল এবাদ ব্রিজসহ প্রায় ১০ স্পটে খুচরা ইয়াবা বিক্রি করে।

তার একাধিক সহযোগীও রয়েছে। আমি স্থানীয় প্রশাসনের কাছে তাকে গ্রেফতার করে উপযুক্ত শাস্তির জোড় দাবী জানাই।’
লালবাগ থানার ২৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক শেখ হাসমত বলেন, ‘ফরমা বিল্লাল একসময় বেড়িবাঁধে শশা, গাজর, আচার বিক্রি করতো। ধীরে ধীরে সে লালবাগ থানার সোর্স হয়ে উঠে। তখন থেকেই অদৃশ্য শক্তির সহায়তায় মাদক এবং ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে সে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এসব কর্মকা-ে জড়িয় পড়ার কারণে লালবাগ এবং নিউমার্কেট থানায় অন্তত ৫টি মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এমনকি অস্ত্রসহ গ্রেফতারও হয়েছিল এই ফর্মা বিল্লাল।’
লালবাগ বাড়ি মালিক সমিতির সভাপতি ইমতিয়াজ হাসান ভুট্টো জানান, ইজিবাইক, অটোরিকশা কার্ড বাণিজ্য, মদ খেয়ে মানুষকে মারধর করাসহ বিভিন্নভাবে হেনস্তা করাটা এই ফরমার নিয়মিত স্বভাব। দিনমজুরী রিনা খাতুন নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, সমতির নাম করে আমার কাছ থেকেও ২০হাজার টাকা নেয় বিল্লাল। কিন্তু আজ পর্যন্ত সে আমার টাকা পরিশোধ করেনি। চাইতে গেলেই বিভিন্ন ভাবে হুমকি ধামকি দেয় এখন।’
লালবাগ থানার নির্মাণ শ্রমিক লীগের সভাপতি শাহনেওয়াজ ভুট্টো বলেন, ‘বিল্লালের বাবা গণি ছিল বিএনপির সন্ত্রাসী জসিম গ্রুপের সহকারী। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আত্মগোপনে চলে যায়। এরপর গণির ছেলে বিল্লাল ভ্যান গাড়িতে করে শশা, আচার, আমরা, গাজর এবং কলা বিক্রি করে সংসার চালাত।

কিন্তু ধীরে ধীরে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলেন কৌশলে। এরপর থেকেই এই এলাকায় তার উত্থান। বিভিন্নভাবে মানুষ ঠকিয়ে, প্রতারণার মাধ্যমে বর্তমানে অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়ে গেছে বিল্লাল। অসাধু উপায়ে বিপুল অর্থ উপার্জন করে তার জন্মস্থান শিবচরে বিলাসবহুল বাড়ি তৈরি করেছেন। সেইসঙ্গে দুটি প্রাইভেটকারের মালিকও বনে গেছেন তিনি। গড়ে তুলেছেন মাল্টিপারপাজ সমিতি।

লালবাগ থানার জনি নামের এক ভুক্তভোগী জানান, আমার এক প্রাইভেটকার বিল্লাল কিনে নেয়। কিন্তু টাকা চাইলে না দিয়ে উল্টো আমার বিরুদ্ধে মামলা করে আমাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয় এই ফর্মা বিল্লাল।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে লালবাগ থানার পুলিশ কর্মকর্তা মনোয়ার বলেন, ‘আমরা নিজেরাও ফর্মা বিল্লালের ধারা বিভিন্ন সময় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি।

বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জনের নাম ভাঙ্গিয়ে এসব প্রতারণা করে থাকে সে। তার বিরুদ্ধে দ্রুতই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করব আমরা।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘বিল্লাল ক্রমেই ভয়ংকর হয়ে উঠছে। তার বিরুদ্ধে যে কোন সময়ই কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে প্রস্তুত রয়েছি আমরা।’




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top