চাঁদপুরের এক নারী মন্ত্রী নদী দখলে সহায়তা করেন

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০১:৫৫

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী

চাঁদপুরের মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও নদী দখলের পেছনে একজন নারী মন্ত্রীর ভূমিকা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী।

আজ রোববার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষে ‘বাংলাদেশের নদ-নদী: সংজ্ঞা ও সংখ্যা’ শিরোনামে এক সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে মনজুর আহমেদ চৌধুরী এমন মন্তব্য করেন।

মনজুর আহমেদ বলেন, মেঘনায় এর আগে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করা হয়েছে। যাঁদের নেতৃত্বে এই কাজ বন্ধ করা হয়েছে, তাঁদের পরে পানিশমেন্ট হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হয়েছে। স্ট্যান্ড রিলিজ দেওয়া হয়েছ।

তিনি বলেন, আবার সেখানে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন শুরু হয়েছে। আর এখানে ভূমিকা রয়েছে একজন নারী মন্ত্রীর। এই হায়েনার দল থেকে নদীকে বাঁচানো যাচ্ছে না। এই হায়েনার দলের পেছনে আছে রাজনৈতিক শক্তি। চাঁদপুরের ওই নারী মন্ত্রী তাদের সহায়তা করেন।

মনজুর আহমেদ বলেন, গত বছর মেঘনা নদীতে বালু সন্ত্রাসীরা ছিলেন। তাঁদেরকে ৩০০ ড্রেজারসহ উৎখাত করা হয়েছে। মেঘনায় যে বড় ইলিশ পাওয়া যায় তার একটা কারণ এই বালু সন্ত্রাসী উৎখাত। সেখানে এডিসি ছিলেন দাউত হোসেন চৌধুরী, একজন ইলিশ গবেষক ড. হারুণ ছিলেন। তাঁদের সহযোগিতায় বালু সন্ত্রাসীদের উৎখাত করা হয়েছে। কিন্তু তাঁদের বদলি করে দেওয়া হয়েছে। দাউত হায়দারকে রাঙামাটিতে বদলি করা হয়। আর ইলিশ গবেষককে চিংড়ি গবেষণায় পানিশমেন্ট বদলি করা হয়। এসব সাহসী অফিসারকে পুরস্কারের বদলে বদলি করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আবার সেই মেঘনায় বালু সন্ত্রাসী ফিরে এসেছে। গতবার এরা ৬৬৮ কোটি সিএফটি বালু চুরি করেছে। যার বাজার মূল্য সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকা। এখন আবার ২০০ কোটি সিএফটি বালুর কথা বলা হচ্ছে। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদী লিজ দেওয়ার নামে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। আর এগুলো বিক্রি করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়সহ স্থানীয় জেলা প্রশাসক। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।

এর আগে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক হাইড্রোলজিস্ট মো. আখতারুজ্জামান তালুকদার। তিনি দেশের নদ-নদীর সংখ্যা ও সংজ্ঞা নির্ধারণ করার ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেন।

আখতারুজ্জামান বলেন, সারা দেশে জেলা, উপজেলা, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেশের নদীর সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশে এখন ১ হাজার ৮টি নদী আছে, যার দৈর্ঘ্য ২২ হাজার কিলোমিটার। নদীর সংখ্যা নির্ধারণে কোনো ব্যয় হয়নি।

এর আগে গত ১০ আগস্ট নদী রক্ষা কমিশনের প্রকাশিত খসড়া তালিকায় দেশে নদ-নদীর সংখ্যা উল্লেখ করা হয় ৯০৭টি। ওই তালিকা প্রকাশের পর পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন আপত্তি জানায়।

আখতারুজ্জামান বলেন, দেশের প্রতিটি জেলার ওপর দিয়ে ২০টি নদী প্রবাহিত হয়। আর সর্বোচ্চ ৯৭টি নদী সুনামগঞ্জ জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। দেশে তেল-গ্যাস-সোনা বা সম্পদ না-ই থাকতে পারে। তবে নদীর মতো বড় সম্পদ আছে, যেটা কখনো গোনায় ধরা হচ্ছে না।

নদীর সংখ্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৩০০ কিলোমিটারের বেশি দৈর্ঘ্যের পদ্মা ও ইছামতি। ইছামতি নদীই আছে ১১টি। বিভিন্ন জায়গায় এই নামে পরিচিত। ২৮০ কিলোমিটারের ওপরে আছে পাঁচটি নদী। ২০০ থেকে ২৭৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ৯টি নদী আছে। ১০০ থেকে ১৯৯ কিলোমিটারের মধ্যে আছে ৪২টি নদী। পাঁচটি নদী আছে ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে। ১০ থেকে ৯৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের আছে ৪৮০টি নদী। ১ থেকে ৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের আছে ৩৭৬টি নদী। ১ কিলোমিটারের কম ৪১টি। আর দৈর্ঘ্য সম্পর্কে তথ্য নেই ৫৫টি নদীর। দেশের দীর্ঘতম নদী পদ্মা, যার দৈর্ঘ্য ৩৪১ কিলোমিটার।




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top