ইউনিয়ন পর্যায়ে শনিবার আ.লীগ-বিএনপির কর্মসূচি, সহিংসতার আশঙ্কা

 ইউনিয়ন পর্যায়ে শনিবার আ.লীগ-বিএনপির কর্মসূচি, সহিংসতার আশঙ্কা

সরকারের পতনের দাবিতে গত বছরের অক্টোবর থেকে বিভাগীয় গণসমাবেশ শুরু করে বিএনপি। শুরুর দিকে কিছু প্রতিবন্ধকতা ছাড়া অনেকটা নির্বিঘ্নে কর্মসূচি পালন করেছিল দলটি। কিন্তু গত বছরের ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ নিয়ে দেশের রাজনীতিতে তৈরি হয় উত্তেজনা। সমাবেশ থেকে দলটি সহিংসতা করতে পারে—এমন আশঙ্কায় রাজধানীতে সতর্ক অবস্থান নেয় আওয়ামী লীগ।

এরপর থেকে বিএনপির কর্মসূচির দিনই শান্তি সমাবেশ করছে আওয়ামী লীগ। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দেশের ইউনিয়ন পর্যায়ে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচির বিপরীতে শান্তি সমাবেশ করার ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিএনপির অতীত রাজনৈতিক কর্মসূচির অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। তারা ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে আন্দোলনের নামে দেশজুড়ে অগ্নিসন্ত্রাস করেছিল। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন ঘিরে আবারও তারা সেই ধারায় ফিরতে পারে বলে আশঙ্কা ক্ষমতাসীনদের। গণসমাবেশের নামে ঢাকায় অবস্থানের ষড়যন্ত্র তাদের ছিল। কিন্তু সরকারের শক্ত অবস্থানের কারণে তারা ব্যর্থ হয়েছে। এবার পদযাত্রার নামে তৃণমূলে সহিংসতা করতে পারে বলে দাবি করে তা মোকাবিলায় ইউনিয়ন ইউনিয়নে সতর্ক পাহারায় থাকবে তারা।

এদিকে কর্মসূচি নিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, বিএনপি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিলেই আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে। বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দিলে কোনো লাভ হবে না। লাখো জনতা রাস্তায় নেমে প্রমাণ করেছে, গণজোয়ার বন্ধ করা যাবে না।

বিএনপির অতীত কর্মকাণ্ডের কারণে দেশবাসী ও আওয়ামী লীগ আবারও সন্ত্রাসের আশঙ্কা করছেন বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আজ শুক্রবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক দলীয় কর্মসূচিতে তিনি বলেন, ‘পুরোনো তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে তাদের আগুন-সন্ত্রাসের আশঙ্কায় আমরা শান্তি সমাবেশ করেছি। যতক্ষণ বিএনপি আন্দোলন করবে, আমরা শান্তি সমাবেশ করব।’

আওয়ামী লীগ নেতারা দাবি করছেন, বিএনপি নির্বাচন ঠেকানোর নামে ২০১৩-১৪ সালে দেশজুড়ে আন্দোলন করেছিল। এরপর ২০১৫ সালেও জ্বালাও-পোড়াও করেছিল। সেই সময় বিএনপির সহিংসতা মোকাবিলায় ব্যবস্থা নিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরে আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে সহিংসতাবিরোধী কর্মসূচি নেওয়ায় বিএনপি মাঠ ছেড়েছিল। তাই বিএনপি আন্দোলনের শুরু থেকেই মাঠে থেকে তাদের মোকাবিলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ।

গত ৪ ফেব্রুয়ারি নয়াপল্টনের সমাবেশ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রার ঘোষণা দেয় বিএনপি। এরপর একই দিন প্রতিটি ইউনিয়নে শান্তি সমাবেশ করার নির্দেশনা দেওয়া হয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। একই সঙ্গে দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিত থাকারও নির্দেশনা দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের ৭৮টি সাংগঠনিক শাখার মধ্যে ৪০টি কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে দু-তিন দিন আগে মোবাইলে বার্তা দিয়ে ইউনিয়ন পর্যায়ে শান্তি সমাবেশ করতে জেলা কমিটির নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। এরপরেই উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতারা শান্তি সমাবেশ সফল করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বিএনপি-আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির ফলে তৃণমূল পর্যায়েও সহিংসতার আশঙ্কা করছেন অনেকে। যদিও আওয়ামী লীগের নেতাদের দাবি, সহিংসতা হবে না।

জায়গা এক না হলে সহিংসতার আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা সহিংসতা চাচ্ছি না, শান্তি সমাবেশ করব। আমরা আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদের নেতা-কর্মীদের মাঠে রাখছি চাঙা রাখার জন্য।’

কেন্দ্রের নির্দেশে জেলা আওয়ামী লীগ প্রতিটি ইউনিয়নে শান্তি সমাবেশ করার নির্দেশ কয়েক দিন আগে দিয়েছে বলে জানান নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফজাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সেটা করব। আমাদের পক্ষ থেকে সহিংসতার কোনো আশঙ্কা নাই।’

আওয়ামী লীগ সহিংসতা ও সংঘর্ষে বিশ্বাসী নয় বলে দাবি করেছেন দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার আলোকঝাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মোকশেদুল গনি রাব্বু শাহ। তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো সংঘর্ষে বিশ্বাসী না, কেউ যদি গায়ে উঠে পড়ে সে ক্ষেত্রে প্রতিরোধ করব।’

এদিকে পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘বিএনপি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিলেই তারা (আওয়ামী লীগ) পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে। বিএনপি কর্মসূচি দিচ্ছে আর তারা নাকি শান্তির কর্মসূচি দিচ্ছে। আমরা বলতে চাই, বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে বাধা দেওয়া চলবে না। লাখো জনতা রাস্তায় নেমে প্রমাণ করেছে, গুলি করে, হত্যা করে, মিথ্যা মামলা দিয়ে, গায়েবি মামলা দিয়ে গণজোয়ার বন্ধ করা যাবে না।’

আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয়তাবাদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (জেটেব) আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

আমীর খসরু আরও বলেন, ‘বিএনপির কর্মসূচির বিপরীতে আওয়ামী লীগের এই পাল্টা কর্মসূচি থেকে বোঝা যায়, তাদের রাজনৈতিক দৈন্য এমন জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে যে, তারা পাল্টা কর্মসূচি দিয়েও জনগণকে আকৃষ্ট করতে পারছে না। বিএনপির কর্মসূচিকে তারা বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে।’

দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার শতগ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মকবুলুর রহমান মানিক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করতে চাই, সংঘাতের পথে যেতে চাই না। আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাই না। তবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’

তবে দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার আলোকঝাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মোকশেদুল গনি রাব্বু শাহ বলেন, ‘আমরা কোনো সংঘর্ষে বিশ্বাসী না, কেউ যদি গায়ে উঠে পড়ে সে ক্ষেত্রে প্রতিরোধ করব।’

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের চলমান আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ৭ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ প্রথম থেকেই হুমকি দিয়ে, উসকানি দিয়ে আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে সংঘাতের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা খুব সচেতনভাবে এই সংঘাত এড়িয়ে চলছি।’ এ সময় পাল্টা কর্মসূচি দেওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য আওয়ামী লীগকে অনুরোধ জানান বিএনপির মহাসচিব।




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top