ডিএসসিসির ড্রেন নির্মাণ, মানহীন কাজে জনদুর্ভোগ

রাজধানীর আজিমপুর কলোনিতে বসবাস করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন। বাসা থেকে বের হয়ে কলোনির দক্ষিণ পাশের গেট বরাবরে থাকা ড্রেনের একটি গর্তের কারণে প্রায় প্রতিদিন ভোগান্তিতে পড়ছেন। অথচ ড্রেনের কাজ শেষে হয়েছে এক বছর আগে। কিন্তু এর মধ্যে সেখানো এখনো স্ল্যাব বসানো হয়নি।
গতকাল এ কর্মকর্তা অনেকটা ক্ষোভের সঙ্গেই কলোনির দেয়ালঘেঁষে থাকা মৃত্যুকূপের মতো বেশ কয়েকটি গর্ত দেখিয়ে বলেন, ‘পুরো এলাকার ড্রেনের কাজ শেষ হয়েছে। অথচ কলোনির চারপাশ দিয়ে ফুটপাতের ৭-৮টি স্ল্যাব নেই। কিছু জায়গায় আমরা বাঁশের খুঁটি দিয়ে রেখেছি। এরপরও মাঝেমধ্যে রিকশা বা ছোট ছোট যানবাহন এ গর্তে পড়ে যায়।’
তিনি বলেন, ‘সড়কটিতে যেহেতু স্কুল-কলেজ ও অফিসে চলাচলকারী লোকজনের চাপ থাকে, তাই এ গর্তটা আমাদের খুবই আতঙ্কে রাখে। এ বিষয়ে গর্তপূর্ত বিভাগকে অবহিত করা হলে তারা জানায়, কলোনির বাউন্ডারি ওয়ালের বাইরে তাদের মেরামত করার সুযোগ নেই। এটি মূলত সিটি করপোরেশনের কাজ।’
আজিমপুর এলাকার ফুটপাতে এ ধরনের গর্তের ভোগান্তির কথা জানান লিটল এঞ্জেলস স্কুলের অভিভাবক খসরুজ্জামান মোল্লা। তিনি বলেন, আজিমপুর চৌরাস্তা থেকে এতিমখানার দিকে যেতে হলে পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে। রাস্তায় উন্নয়ন কাজ চলায় হাঁটার একমাত্র উপায় ফুটপাত। কিন্তু সেই ফুটপাতেরও ড্রেনের কাজ হ-য-ব-র-ল অবস্থায়। কোথাও খুঁড়ে রাখা হয়েছে, কোথাও ইট বসিয়ে অর্ধেক কাজ করা হয়েছে। ফলে এ ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে গেলে যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। আবার যেসব জায়গায় ইটের দেওয়াল দিয়ে ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে সেখানে নিম্নমানের কাজের জন্য রাস্তায় পানি চলে আসছে। বেশিরভাগ স্থানে নামকাওয়াস্তে কাজ করছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এসব যেন দেখার কেউ নেই।’
এলাকাবাসীর নানা অভিযোগের সত্যতা মেলে এতিমখানা কলোনির পাশ দিয়ে একটু সামনে যাওয়ার পর। সেখানে স্থানীয় বাসিন্দারা ড্রেনের কাজে ব্যবহার করা উপকরণ দেখিয়ে নানা অভিযোগ তোলেন। কোথাও দশ ইঞ্চি ইটের গাঁথুনি দেওয়া হলেও কোথাও পাঁচ ইঞ্চি ইটের গাঁথুনি। আবার এসব গাঁথুনির পর দেওয়া হয়নি সিমেন্টের প্রলেপ। ফলে এক ইটের সঙ্গে আরেক ইট বসিয়ে রাখার মতো দৃশ্য যে কারও চোখে পড়ছে। আবার ইটের আস্তর না থাকায় ড্রেনের পানি চুয়ে চুয়ে প্রবেশ করছে সরকারি কলোনির ভেতরে। সেখানে পানির প্রবেশ পথে ইটও ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, এভাবে চলতে থাকলে এসব ড্রেনও ভেঙে যেতে পারে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) অঞ্চল-৩ সূত্রে জানা গেছে, আজিমপুর ইন্টারসেকশন থেকে লালবাগ ইন্টারসেকশন পর্যন্ত একটি প্রকল্প রয়েছে। ডিএসসিসির জলাবদ্ধতা সম্পর্কিত প্রকল্পের এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে সাত কোটি টাকা। রুহুল ও জাহিদের জাজবেল নামের একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এ কাজটি বাস্তবায়ন করছে। তারা মূলত রাস্তায় পাইপ বসানো, ফুটপাত ও ড্রেন নির্মাণের কাজ করছে। চলতি বছরের শুরুতে এ কাজের সময়সীমা আগামী ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এরমধ্যে পাইপ বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। এখন ড্রেন আর ফুটপাতের কাজ চলছে।
ডিএসসিসির অঞ্চল-৩ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মফিজুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা ড্রেন নির্মাণ প্রায় শেষ করেছি। কিছু জায়গায় স্ল্যাব বসানো হবে। এগুলো দ্রুত সময়ে যাতে হয় সেই বিষয়ে ঠিকাদারকে বলা হয়েছে।’
এ বিষয়ে ডিএসসিসির মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক (তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী) মো. খায়রুল বাকেরের বক্তব্য জানতে তার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: