যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৫ কোটি ১৪ লাখ ৮ হাজার ২০০ টাকা আত্মসাৎ
দুদকের জালে সাবেক এমপিপুত্র সজল মোল্লা
জাতীয় নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে ততই উত্তাপ ছড়াচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। তাছাড়া প্রশাসনেও চলছে উত্তাপ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) নানা উদ্যোগ নিয়েছে।
এদিকে, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা টাকা থেকে দৈনিক জমা-খরচ বইয়ে কম দেখানো, শিক্ষকদের পিএফ ফান্ডের টাকা অ্যাকাউন্টে জমা না দেয়া, কাল্পনিক ঋণ গ্রহণ ও ভুয়া ঋণ পরিশোধ দেখানো ও ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৫ কোটি ১৪ লাখ ৮ হাজার ২০০ টাকা আত্মসাৎ করে দুদকের জালে ফেঁসে গেছেন সাবেক গভর্নিং বডির সভাপতি মশিউর রহমান মোল্লা সজলসহ অত্র প্রতিষ্ঠানের ৬ শিক্ষক ও কর্মকর্তা। তিনি ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-৫ আসনের প্রয়াত এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লার গুণধর পূত্র। সজলের বিতর্কিত কর্মকান্ডের ঘটনায় আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ বিব্রতবোধ করছেন।
সম্প্রতি যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অর্থ আত্মসাতের মামলায় চার্জশীট দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। ওই চার্জশিটে নাম থাকা অন্যরা হলেন- যাত্রাবাড়াী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আবু ইউসুফ, অফিস সহকারী শহিদুল ইসলাম, সাবেক শিক্ষক প্রতিনিধি ও বর্তমানে ইংরেজি শিক্ষক আব্দুর রউফ মোল্লা, সাবেক শিক্ষক প্রতিনিধি ও বর্তমানে ইংরেজি শিক্ষক অহিদুল ইসলাম এবং সাবেক শিক্ষক প্রতিনিধি ও বর্তমানে প্রাথমিক শাখার শিক্ষক অহিদা খানম। তার মধ্যে অফিস সহকারী শহিদুল ইসলাম অবসরে চলে গেছেন। তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিটটি দাখিল করেছেন দুদকের উপ পরিচালক হাফিজুল ইসলাম। এরআগে ২০১৯ সালে উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নুর আলম সিদ্দিকী মামলাটি দায়ের করেন।
স্কুলে এখনও কর্মরত চার্জশিটভুক্ত তিন শিক্ষকের বিষয়ে বর্তমান অধ্যক্ষ মরিয়ম বেগম একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা অফিশিয়ালি চার্জশিটের বিষয়টি জানি না। এখনও কোনো কিছু আসেনি। জানার পর ব্যবস্থা নেয়া হবে। সম্ভবত ২০১৩ কিংবা ২০১৪ সালে কলেজ শাখা চালু করা হয়।’
মুজিব কিল্লা নির্মাণ, সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালক (যুগ্মসচিব) ও যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির বর্তমান সভাপতি জানে আলম বলেন, ‘আমার কাছে খবরটি এখনও আসেনি। অফিসিয়ালি জানার পর পরিপত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। স্কুল অ্যান্ড কলেজের ক্ষেত্রে গভর্নিং বডিই থাকে। ম্যানেজিং কমিটি থাকে না। শুধু স্কুল হলে ম্যানেজিং কমিটি থাকে। গত জানুয়ারি মাসে আমি দায়িত্ব নিয়েছি।
চার্জশিটের তথ্যানুযায়ী, ২০১২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের ২০ মার্চ সময়ে দৈনিক আদায় রেজিস্টার অনুযায়ী বিভিন্ন তারিখে মোট ৬ কোটি ৮৭ লাখ ৯৭ হাজার ৯৫৫ টাকা আদায় করা হয়। কিন্তু, জমা-খরচ খাতায় ওই সময়ে ৬ কোটি ৫২ লাখ ১০ হাজার ৭৯৮ টাকা জমা দেখানো হয়। এতে ছাত্র-ছাত্রীদের থেকে আদায় করা ৩৫ লাখ ৮৫ হাজার ৪৪ টাকা কম দেখিয়ে আত্মসাৎ করা হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের ভবিষ্যৎ তহবিলে (পিএফ) জমা দেয়ার জন্য স্কুলের নামে সোনালী ব্যাংক যাত্রাবাড়ী শাখার অ্যাকাউন্ট থেকে ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি তারিখে ১১ লাখ ৮৯ হাজার ৩০৫ টাকা উত্তোলন করা হয়। এই টাকা ভবিষ্য তহবিলের ব্যাংক হিসাবে জমা না দিয়ে অধ্যক্ষ আবু ইউসুফ ও প্রধান হিসাবরক্ষক শহিদুল ইসলাম অন্যান্য আসামিদের সঙ্গে যোগসাজশে আত্মসাৎ করেছেন।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০১২ সালের ১ জানুয়ারি তারিখে দৈনিক জমা-খরচ বই অনুসারে নগদ কোনো স্থিতি ছিল না। কিন্তু স্কুলের নামে সোনালী ব্যাংক যাত্রাবাড়ী শাখার অ্যাকাউন্ট অনুযায়ী ওই তারিখে ২ লাখ ৪০ হাজার ৫৫৮ টাকা ব্যাংক স্থিতি ছিল। জমা-খরচ বই ও মাসিক আয়-ব্যয়ের হিসাব বিবরণী মোতাবেক ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ে মোট আয় ২৮ কোটি ৩২ লাখ ২৩ হাজার ৭৫৮ টাকা এবং মোট ব্যয় ২৪ কোটি ২৩ লাখ ৮৫ হাজার ৭৩৪ টাকা। সেই হিসেবে মোট উদ্বৃত্তের পরিমাণ ৪ কোটি ১০ লাখ ৭৬ হাজার ৬১২ টাকা। ২০১৭ সালের মার্চ মাসে নগদ জমা-খরচের খাতা অনুযায়ী নগদ স্থিতি ১ কোটি ১৪ লাখ ৯৪ হাজার ৫৪৪ টাকা এবং ব্যাংক হিসাব বিবরণী অনুযায়ী ব্যাংক স্থিতি ৩৭ লাখ ৮৫ হাজার ৮১৫ টাকাসহ মোট ১ কোটি ৫২ লাখ ৮০ হাজার ৩৫৯ টাকা। অধ্যক্ষ আবু ইউসুফ ও প্রধান হিসাবরক্ষক শহিদুল ইসলাম অন্যান্য আসামিদের সঙ্গে যোগসাজশে অবশিষ্ট নগদ ২ কোটি ৫৭ লাখ ৯৮ হাজার ২৫৩ টাকা হিসাবে কম দেখিয়ে আত্মসাৎ করেছেন।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, স্কুলের উদ্বৃত্ত তহবিল ও দৈনিক কালেকশন অনুযায়ী কখনও কোনো ধরনের ঋণের প্রয়োজন ছিল না। তারপরও অধ্যক্ষ আবু ইউসুফ আত্মসাতের উদ্দেশে জমা-খরচ বইয়ে ১ কোটি ২৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকার কাল্পনিক ঋণ দেখিয়েছেন। তার মধ্যে ৩৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যাংকে জমা দেখান। কাল্পনিক ঋণ হিসাবের বিপরীতে ভুয়া ঋণ পরিশোধের নামে ৯২ লাখ ৮৫ হাজার টাকার মধ্যে ১৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা নগদ উদ্বৃত্ত থেকে পরিশোধ দেখান। অধ্যক্ষ আবু ইউসুফ ও প্রধান হিসাবরক্ষক শহিদুল ইসলাম অন্য আসামিদের সঙ্গে যোগসাজশে অবশিষ্ট ৭৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ভয়া ঋণ পরিশোধের (প্রকৃতপক্ষে পরিশোধ করা হয়নি) নামে ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন।
তদন্তকালে দেখা যায়, স্কুলের নামে প্যাডে তৈরি ডেবিট ভাউচারে ২০১৫ সালের ১৭ মে তারিখে কমিটি গঠন বাবদ তিনটি আলাদা ভাউচারে ২ লাখ ৩০ হাজার, একই বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি তারিখে একটি ভাউচারে অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা বিল ও সম্মানি বাবদ ২২ লাখ ৭২ হাজার ৩০৩ টাকা; ৯ জুন তারিখে দুটি ভাউচারে মিডিয়া খরচ বাবদ ৮০ হাজার টাকা; ২০১৬ সালের ১১ জুলাই একটি ভাউচারে মামলার নিষ্পত্তি বাবদ ৫০ হাজার ও ২০১৩ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর একটি ভাউচারে ঋণ পরিশোধ বাবদ ১০ লাখ টাকাসহ মোট ৪০ লাখ ৮২ হাজার ৩০৩ টাকা সেবাদানকারী বা প্রাপকের তৈরি বিল ছাড়াই স্কুলের নিজস্ব ডেবিট ভাউচারের মাধ্যমে পরিশোধ (প্রকৃতপক্ষে পরিশোধ করা হয়নি) দেখিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে। অধ্যক্ষ আবু ইউসুফ ও প্রধান হিসাবরক্ষক শহিদুল ইসলাম অন্যান্য আসামিদের সঙ্গে যোগসাজশে ভাউচার ছাড়াই খরচ দেখিয়ে ৯৯ লাখ ৬৭ হাজার ১২ টাকা আত্মসাৎ করেন।
দুদক সূত্র বলছে, আবু ইউসুফ তার দায়িত্ব পালনকালে ২০১২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের ২০ মার্চ সময়ে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা টাকা থেকে দৈনিক জমা-খরচ বইয়ে কম দেখিয়ে ৩৫ লাখ ৮৭ হাজার ১৫৭ টাকা, জমা-খরচ হিসাব গরমিল দেখিয়ে ২ কোটি ৫৭ লাখ ৯৮ হাজার ২৫৩ টাকা, প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের ভবিষ্যৎ তহবিলে (পিএফ) জমা দেয়ার জন্য ব্যাংক থেকে উত্তোলন করেও পিএফ ফান্ডের অ্যাকাউন্টে জমা না দিয়ে ১১ লাখ ৮৯ হাজার ৩০৫ টাকা, কাল্পনিক ও ভুয়া ঋণ পরিশোধের নামে ৭৩ লাখ ৩৫ হাজার, স্কুলের নামের প্যাডে তৈরি করা ডেবিট ভাউচারের মাধ্যমে উত্তোলন করা ৪০ লাখ ৯২ হাজার ৮০৩ টাকা, কোনো ধরনের ভাউচার ছাড়াই ভুয়া খরচ দেখিয়ে ৯৯ লাখ ৬৭ হাজার ১২ টাকাসহ মোট ৫ কোটি ১৯ লাখ ৬৯ হাজার ৫৩০ টাকা অফিস সহকারী/হিসাবরক্ষক শহিদুল ইসলাম ও অন্য আসামিদের সঙ্গে যোগসাজশে আত্মসাৎ করেছেন।
দুদক সূত্র আরো বলছে, অফিস সহকারী শহিদুল ইসলাম প্রতিষ্ঠানের জন্য সংগ্রহ করা সম্পদ ও তহবিলের যথাযথ লিপিবদ্ধ এবং আয়-ব্যয়ের যথাযথ হিসাব সংরক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন। এছাড়াও ২০১৩ সালের ২৫ মে থেকে ২ বছরের জন্য ম্যানেজিং কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আব্দুর রউফ মোল্লা। তিনি ২০১৪ সালের ১৮ মার্চ গঠিত অর্থ কমিটিতে এবং ১৮ ডিসেম্বর গঠিত অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিটিতে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি প্রতিষ্ঠানের জন্য সংগ্রহ করা সম্পদ ও তহবিলের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরণ ও নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে ছিলেন। তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন না করে ২০১৩ সালের ৩১ মে থেকে ২০১৫ সালের ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা টাকা থেকে দৈনিক জমা-খরচ বইয়ে কম দেখিয়ে ১১ লাখ ৪ হাজার ২৪৫ টাকা, প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের ভবিষ্যৎ তহবিলে (পিএফ) জমা দেয়ার জন্য ব্যাংক থেকে উত্তোলন করেও পিএফ ফান্ডের অ্যাকাউন্টে জমা না দিয়ে ১১ লাখ ৮৯ হাজার ৩০৫ টাকা, স্কুলের নামের প্যাডে তৈরি করা ডেভিট ভাউচারের মাধ্যমে উত্তোলন করা ৩৯ লাখ ৫২ হাজার ৩০৩ টাকা, কোনো ধরনের ভাউচার ছাড়াই ভুয়া খরচ দেখিয়ে ২০১২ সালের ১৫ জুলাই থেকে ২০১৫ সালের ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে ৮৮ লাখ ৬৭ হাজার ২ টাকাসহ মোট ১ কোটি ৫১ লাখ ১২ হাজার ৮৫৫ টাকা সাবেক অধ্যক্ষ আবু ইউসুফ, অফিস সহকারী বা হিসাবরক্ষক শহিদুল ইসলাম ও অন্য আসামিদের সঙ্গে যোগসাজশে আত্মসাৎ করেছেন।
এসব অভিযোগ ও টাকা আত্মসাত, দুদকের মামলা ও চার্জশীপসজ সার্বিক বিষয়ে জানতে গভর্নিং বডির সাবেক সভাপতি মশিউর রহমান মোল্লা সজলকে তার ব্যক্তি মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এছাড়াও এমপিপুত্র সজল মোল্লার বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ রয়েছে,
এছাড়াও এমপিপুত্র সজল মোল্লার বিরুদ্ধে রয়েছে বহু অভিযোগ, ‘বিএনপি আমলে ডেমরায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভামঞ্চে যারা আগুন দিয়েছিল, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর জুলুম-অত্যাচার চালিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়েছিল, তাদের দিয়ে ডেমরার সর্বময় নিয়ন্ত্রণ করতেন সজল মোল্লা। এখানকার ব্যবসা-বাণিজ্য, টেন্ডার, বালুমহাল, চাঁদাবাজি একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ছিলেন তারা। এলাকার স্কুল-কলেজের পরিচালনা পর্ষদ, সামাজিক সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে ঠাঁই পেয়েছে তারাই।
এদেরকে ডেমরা এলাকার ক্ষমতার সর্বস্তরে প্রতিষ্ঠিত করেছে স্থানীয় এমপি প্রয়াত হাবিবুর রহমান মোল্লার পরিবার। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নিবেদিতপ্রাণ নেতাকর্মীরা ক্ষোভে-দুঃখে-হতাশায় রাজনীতি ছেড়ে ঘরে বসে ছিলেন।’ দুঃখ-ক্ষোভ মেশানো কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন ঢাকা-৫ নির্বাচনী এলাকার সারুলিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আবুল কাশেম ভুঁইয়া।
রাজধানীর ডেমরা, যাত্রাবাড়ী ও কদমতলী থানাধীন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৬৫ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে ঢাকা-৫ আসন। এই আসনের প্রয়াত এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লা মৃত্যুর আগে গুরুতর অসুস্থ ছিলেন। প্রায় এক বছর তাঁকে প্রকাশ্যে কোথাও দেখা যায়নি। তাঁর অবর্তমানে ওই এলাকার রাজনীতি দেখভাল করেন তাঁর তিন ছেলে। বড় ছেলে মশিউর রহমান মোল্লা ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।।
মেজো ছেলে মাহফুজুর রহমান শ্যামল দলের বড় কোনো পদে না থাকলেও এলাকার সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন। তিনি ডেমরা শামসুল হক খান উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ছিলেন। ছোট ছেলে মনির হোসেন বড় ভাইকে সহযোগিতা করেন। এ ছাড়া প্রয়াত এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লার তিন মেয়ের জামাই মফিজুল ইসলাম বকুল, জসিম উদ্দিন রিপন ও রফিকুল ইসলাম যুক্ত রয়েছেন এই নির্বাচনী এলাকার নানা দখল-বাণিজ্যে। যাত্রাবাড়ী থানার মা ও শিশু হাসপাতালের টেন্ডার থেকে শুরু করে সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করেন সাবেক প্রয়াত এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লার এই তিন মেয়ে জামাই।
দলের নেতাকর্মীদের কৌশলে দূরে সরিয়ে বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে বাণিজ্য-বেসাতিতে মশগুল ছিলেন প্রয়াত এমপির পরিবার। এদের কারো কারো রয়েছে একাধিক অট্টালিকা। অন্যদিকে এসব কারণে কোণঠাসা হয়ে রাজনীতিবিমুখ হয়ে পড়েছে এই এলাকার নিবেদিতপ্রাণ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। সংখ্যায় এরা বিপুল।
ডেমরা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অভিযোগ, ১৯৮৬ সালের মার্চ মাসে ডেমরায় যারা শেখ হাসিনার জনসভার মঞ্চে আগুন দিয়েছিল, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর গুলি চালিয়েছিল, জাতীয় পার্টির সেই হাসিবুর রহমান হাসু, আবদুল্লাহ, ইসরাফিল আলম পরে বিএনপিতে যোগ দিয়ে বর্তমানে এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লা ও তাঁর পরিবারের ঘনিষ্ঠজন। তারাই এখন নিয়ন্ত্রণ করছে ডেমরা আওয়ামী লীগ। তারাই বেপরোয়া চাঁদাবাজি করে বর্তমানে এই নির্বাচনী এলাকায় দলের দুর্নাম বাড়াচ্ছে। মোল্লা পরিবারের সদস্য ও তাদের ঘনিষ্ঠজনরা মিলে এভাবে ঢাকা-৫ নির্বাচনী এলাকায় মোল্লা লীগের শাসন কায়েম করেছে।
এক সময় প্রয়াত এমপি পরিবারের ছত্রচ্ছায়ায় নির্বাচনী এলাকার স্কুল-কলেজসহ সামাজিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষপদগুলো দখল করে নিয়েছিলেন। পাশাপাশি বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও ফ্রিডম পার্টি থেকে আসা লোকদের এই এলাকার চাঁদাবাজির উৎসস্থলগুলোতে দায়িত্ব দিয়ে পুনর্বাসন করা হয়েছে। এমন অনেক নাম এলাকার মানুষের মুখে মুখে। এদের মধ্যে ডেমরা থানায় বিএনপি থেকে আসা বেলায়েত হোসেন বাবু, হেদায়েত উল্লাহ পণ্ডিত বাবু, হাসিবুর রহমান হাসু, আনোয়ার হোসেন, সায়েদাবাদের আবুল কালাম, তৈয়ব, যাত্রাবাড়ী থানায় ফ্রিডম পার্টি থেকে আসা বাচ্চু, বিএনপি থেকে আসা খোকন অন্যতম। সারুলিয়ার জাকির মাস্টার, আজমত আলী, মাদক কারবারি বজলু কসাই, কোটিপতি বাস হেলপার বাবলু, সালাউদ্দিন, পরিবহন শাহজাহান, মাদক কারবারি সাঈদ ইকবাল, ডেমরার দৌড় সালাউদ্দিনের ভাগনিজামাই ওসমান অন্যতম।
এদের মধ্যে ফ্রিডম পার্টি থেকে আসা বাচ্চু নিয়ন্ত্রণ করে যাত্রাবাড়ী মোড়ের যানবাহনের চাঁদাবাজি। হাসিবুর রহমান হাসু, বেলায়েত হোসেন বাবু, হেদায়েত উল্লাহ পণ্ডিত, আনোয়ার হোসেন নিয়ন্ত্রণ করে ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার এলাকার সব ধরনের যানবাহনের চাঁদাবাজি। সারুলিয়ার জাকির মাস্টার, আজমত আলী, মাদক কারবারি বজলু কসাই, কোটিপতি বাস হেলপার বাবলু, সালাউদ্দিন, পরিবহন শাহজাহান, মাদক কারবারি সাঈদ ইকবাল, ডেমরার দৌড় সালাউদ্দিনের ভাগনিজামাই ওসমান নিয়ন্ত্রণ করে এলাকার বালুমহালের বাণিজ্য ও নৌপথের চাঁদাবাজি।
ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি মাহফুজুর রহমান খান ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় এক চোখ হারিয়েছেন। শরীরে অজস্র স্প্লিন্টার নিয়ে দুর্বিষহ জীবন কাটানো এই নেতাকে কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়নি। সাবেক প্রয়াত এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লা যখন করিম জুটমিলের সিবিএ সভাপতি ছিলেন সে সময় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন হেকিম মাতবর। তাঁকে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় করে রেখে ছিলেন সজল মোল্লা। দলে স্থান না পেয়ে নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছেন প্রবীণ নেতা আবদুল লতিফ মোল্লা, ইদ্রিস ভাণ্ডারি। একসময়ের দাপুটে নেতা এ টি এম গোলাম মোস্তফারও স্থান হয়নি দলে।
ত্রাণ বিতরণের নামে টাকা আত্মসাৎ: করোনা মহামারীর দুর্যোগকালীন সময়ে যখন সারাদেশে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সহযোগিতা কার্যক্রম চালু করা হলেও তখন এই সজল মোল্লা ও শ্যামল মোল্লা বিভিন্ন মিল ফ্যাক্টরি মালিকদের কাছ দানের নামে টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে।
সাব রেজিস্ট্রার অফিস থেকে কোটি টাকা কমিশন পায় মোল্লা পরিবার : ডেমরা সাব-রেজিস্ট্রার অফিস অফিস থেকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক লক্ষ লক্ষ টাকা বাণিজ্য আর এই এই কমিটির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন ,যে কিনা মাতাইল ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ,তার বাবা রেজিস্ট্রার অফিস থেকে কোটি কোটি টাকা কমিশন পেয়ে থাকে এবং সেই টাকার বড় একটি পায় মোল্লা পরিবার।
ইজিবাইক ও অটো রিস্কার চাঁদাবাজির যেই ভাবে চাঁদাবাজির টাকা বন্টন করা হয় মোল্লা পরিবারের সদস্যদের মাঝে ,
ডেমরা যাত্রাবাড়ী থানাধীন বিভিন্ন এলাকার ইজিবাইক ও অটো রিস্কার চাঁদাবাজির মূল অংশ মূল্য পরিবারের তিন ছেলেকে দিতে হয় , যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান এর বিপুল পরিমাণ চাঁদা উত্তোলন করা হয়ে থাকে আরে এই টাকা উত্তোলন করেন বাচ্চু নামের এক শ্রমিক লীগের সভাপতির মাধ্যমে তিনি ৩ ছেলে ৩ মেয়ে তিন জামাই বন্টন করে দেন।
সায়েদাবাদ যাত্রাবাড়ী বাস টার্মিনাল থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পেয়ে থাকেন পরিবারের সকল সদস্য এমনকি মেয়েদের সন্তানরাও।
মোল্লা পরিবারের সেকেন্ড হোম মালয়েশিয়া, মশিউর রহমান সজল বছর দশথেকে বারো বার মালয়েশিয়া এবং আমেরিকা যাওয়া আসা করে থাকেন মালয়েশিয়া সেকেন্ড হোম ও বেশকিছু ব্যবসা করেছে মালয়েশিয়ায় এছাড়াও বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় নামে-বেনামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং গাজীপুর জেলায় বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে। অথচ, তিনি এক সময় সৌদি প্রবাসী ছিলেন।
সদ্য সাবেক সংসদ সংসদ পরিবারের ছোট বড় সবার এই বিলাসবহুল মোল্লা পরিবারে বিলাসবহুল গাড়ি রয়েছে ১৪ থেকে ১৬ টি যার মধ্যে প্রয়াত এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লার জামাতা অল্পদিনে দামি দামি গাড়ি অর্থ-সম্পদ পাহাড় গড়ে তুলছেন এর ভিতরে দ্বিতীয় মেয়ের জামাই রাজা মিলিয়নের চাকরি করতো আগে কিছু ছিল না কিন্তু বর্তমানে বিলাসবহুল গাড়ি টাকার পাহাড় গড়ে তুলছেন। প্রথম সংসদ নির্বাচন করেন তখন তাকে নির্বাচন আর্থিকভাবে সহায়তা করে এলাকার মানুষজন । এখন হাজার কোটি টাকার মালিক মানুষের কাছে এখন রীতিমত আলাদীনের চেরাগ।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: