চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে মরিয়া খামারবাড়ির সেই বিতর্কিত ডিজি

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে মরিয়া খামারবাড়ির সেই বিতর্কিত ডিজি

রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) এর মহাপরিচালক (ডিজি) বাদল চন্দ্র বিশ্বাস ঘিরে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বহিরাগত প্রভাবশালীর একটি সিন্ডিকেটের মূলহোতা মহাপরিচালক (ডিজি) বাদল চন্দ্র বিশ্বাস। নিয়োগ-পদোন্নতিতে দুর্নীতি, দায়িত্বে অবহেলা, জেলা-উপজেলায় বরাদ্দে কমিশন আদায়, কর্মকর্তাদের মধ্যে দলাদলি, সেবা দিতে টাকা লেনদেনসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ওই চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। এতো অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও আবারো চুক্তিভিত্তিক ডিজি হতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তিনি। এজন্য বিভিন্ন লবিং তদবির চালাচ্ছেন বলে একটি নির্ভরযোগ্যসূত্র থেকে জানা যায়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ডিএই ঘিরে গড়ে ওঠেছে বিশাল সিন্ডিকেট , আর শক্তিশালী বিশাল সিন্ডিকেট তাকে আবারো চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে মরিয়া হয়েঠে। বিশাল সিন্ডিকেটে কর্মকর্তা-কর্মচারীর পাশাপাশি আছেন সাংবাদিকও। নিয়োগ, বদলি, পদায়ন, দরপত্র ও জেলা-উপজেলা পর্যায়ে বরাদ্দসহ সবকিছুতেই রয়েছে তাঁদের ছায়া।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, শক্তিশালী বিশাল সিন্ডিকেটের এসব কর্মকর্তা-কর্মচারী ৫ থেকে ২১ বছর অধিদপ্তরের একই দপ্তরে দিব্যি কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস নেই কারও। নিয়মবহির্ভূতভাবে নিয়োগ-পদোন্নতি বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এই সিন্ডিকেট অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দপ্তরে তদবির করে অতিরিক্ত উপপরিচালক (পিএস টু ডিজি) এই চক্র হাতে রেখেছে একদল সাংবাদিককেও। অপকর্ম ধামাচাপা দেওয়া, ওপর মহলে তদবির ও তাদের বিপক্ষের কর্মকর্তাদের শায়েস্তা করতে তৎপর থাকে সাংবাদিক গ্রুপটি।

যত অভিযোগ

রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) ঘিরে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বহিরাগত প্রভাবশালীর একটি সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে ডিএই। নিয়োগ-পদোন্নতিতে দুর্নীতি, দায়িত্বে অবহেলা, জেলা-উপজেলায় বরাদ্দে কমিশন আদায়, কর্মকর্তাদের মধ্যে দলাদলি, সেবা দিতে টাকা লেনদেনসহ নানা অনিয়মে ডুবছে অধিদপ্তরটি। দুর্নীতিবাজের দাপটে ভেঙে পড়েছে শৃঙ্খলা। অবৈধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ওই চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। সংশ্নিষ্টরা বলছেন, খামারবাড়িতে অতীতেও এ রকম দুর্নীতি হয়েছে, তবে সাময়িক বরখাস্ত কিংবা বদলির মাধ্যমে বারবার দুর্নীতিকে ধামাচাপা দেওয়া হয়। এনিয়ে দৈনিক একটি পত্রিকায় সংবাদ প্রচার হলে,

ওই সংবাদ ঘিরে শুরু হয় তোলপাড়। কর্মকর্তাদের কানে আসে, অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য গণমাধ্যমকর্মীর কাছে সরবরাহ করেন চার কর্মচারী। তাতেই একরোখা হয়ে ওঠে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই)। পত্রিকাকে তথ্য দেওয়ার অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে গঠন হয় তদন্ত কমিটি। দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাঁদের ই-মেইল, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপসহ সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তদন্ত কমিটি নিয়ন্ত্রণে নেয়।

পরে শাস্তির খড়্গ নামে তাঁদের ওপর। চার কর্মচারীকে বদলির চিঠি হাতে ধরিয়ে দিয়ে পাঠানো হয় রাজধানী থেকে দূর-দূরান্তে। তবে অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িতরা থেকে যান আড়ালে। বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরেও প্রতিকার না পেয়ে আদালতের আশ্রয় নেন কর্মচারীরা। আদালত বদলির বিষয়ে স্থগিতাদেশ দেন। এতে আরও তেতে ওঠে ডিএই কর্তৃপক্ষ। বন্ধ করে দেওয়া হয় চার কর্মচারীর বেতন-ভাতা। তাঁদের দাবি, কোনো অপরাধ না করেও শাস্তির মুখে পড়েছেন তাঁরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনিয়ম-দুর্নীতি ঢাকতে মরিয়া হয়ে উঠেছে খামারবাড়ি কর্তৃপক্ষ। সাংবাদিকদের তথ্য না দিতে দেওয়া হয়েছে সতর্কবার্তা। বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন ঘটনা গণমাধ্যমের জন্য হুমকি। আর কর্মচারীদের ই-মেইল ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে নেওয়া ব্যক্তির অধিকার হরণের শামিল।

দুই শিশুকে কৃষি’র ডিজি ও পরিবারের অমানুষিক ‘নির্যাতন’

বৈদ্যুতিক শক দিয়ে দুই শিশু নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) বাদল চন্দ্র বিশ্বাসসহ তার পরিবারের বিরুদ্ধে।নির্যাতনের শিকার দুই শিশুর মধ্যে এক শিশু গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল।
শিশুর পরিবারে ঐ সময় সাংবাদিকদের জানিয়ে ছিলেন খুলনা মহানগরীর বয়রা এলাকায় খুলনা মহিলা কলেজের সামনে কর ভবনের পশ্চিম পাশে ডিজি বাদল চন্দ্র বিশ্বাসের একটি বাড়ি রয়েছে। ওই বাড়িতে ভাড়া থাকেন দুই শিশুর বোন। তাদের বাবা-মা বসবাস করেন পিরোজপুরের ইন্দরকানি উপজেলায়। মাঝে মাঝে পরিবারের সঙ্গে ওই দুই শিশু ইন্দরকানি থেকে খুলনায় বোনের বাসায় আসতো।

তাদের বাবা নেছার উদ্দীন হাওলাদার ইন্দরকানি উপজেলার পশ্চিম বালিপাড়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। মা নাছিমা আক্তারও একই বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন।

নেছার উদ্দীন হাওলাদার বলেন, ‘আমার দুই ছেলেকে প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা ধরে একটানা নির্যাতন চালিয়েছেন ডিজি বাদল চন্দ্র বিশ্বাস ও তার পরিবারের সদস্যরা। এক ছেলের পায়ের গোড়ালির রগ কাটার চেষ্টা ও ঘাড়ে চাকুর আঘাত, ডান হাতের কব্জি, ডান কানের গোড়া ও মাথার পেছনে কারেন্টের শক দেয়া হয়েছে।

‘অন্য ছেলের পিঠের ডান পাশে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে কিল-ঘুষি মারা হয়েছে। নির্যাতন করে তাদের মিথ্যা স্বীকারোক্তি নিয়ে ভিডিও করা হয়েছে। একইসঙ্গে শিশু দুটির কাছ থেকে কাগজে লিখিত নিয়েছে ডিজি বাদল চন্দ্র। আমার সন্তানদের বয়স মাত্র ১২ বছর। এই বয়সে এমন ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়ে ওরা ভীতসম্ভ্রন্ত হয়ে পড়েছে।’

এ প্রসঙ্গে রোববার দুপুরে ডিজি বাদল চন্দ্র বিশ্বাস ও তার ছেলে শুভ বিশ্বাসের নাম উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) সোনাডাঙ্গা থানায় অভিযোগ দিয়েছিলেন নেছার উদ্দীন হাওলাদার। অভিযোগপত্রে নাম উল্লেখ না করলেও ডিজি বাদল চন্দ্র বিশ্বাসের স্ত্রী ও দুই শ্যালিকাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সোনাডাঙ্গা তৎকালিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমতাজুল হক। তিনি বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।’

 




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top