বরাদ্দের এক দশক পর জমি বুঝিয়ে দিল জেলা প্রশাসন

চট্টগ্রামের পর এবার ঢাকায় অ্যাকশন শুরু ডিসি মমিনুরের

চট্টগ্রামের পর এবার  ঢাকায় অ্যাকশন শুরু ডিসি মমিনুরের

অনেস্ট, হার্ড ওয়ার্কিং এবং ট্রান্সপারেন্ট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান চট্টগ্রামের পর এবার ঢাকায় অ্যাকশন শুরু করেছেন । 

শেখ রাসেল জাতীয় শিশু–কিশোর পরিষদের জন্য ২০১২ সালে এক একর জায়গা বরাদ্দ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘ এক দশকের বেশি সময় পর আজ সোমবার দুপুরে ওই জায়গার দখল পরিষদের প্রতিনিধিদের কাছে বুঝিয়ে দিয়েছেন ঢাকা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, রাজ মুশুরী মৌজায় সরকারের বেশ কিছু খাসজমি আছে। এ রকম একটি খাসজমি এটি, যা এক নম্বর খাস খতিয়ানের এক একর জমি। ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই জমি শেখ রাসেল জাতীয় শিশু–কিশোর পরিষদের জন্য বিনা মূল্যে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত দিয়েছেন। আজ আনুষ্ঠানিকভাবে এই জায়গা তাদের বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

এত দিন কেন বুঝিয়ে দেওয়া যায়নি, জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘এত দিন হয়নি, সেটা অতীত। এখন বুঝিয়ে দিচ্ছি, এটা নিয়ে প্রশংসা (অ্যাপ্রিশিয়েট) করুন। ওই এলাকায় থাকা এমন খাসজমির সন্ধান দিলে পর্যায়ক্রমে উদ্ধার করা হবে বলেও জানান তিনি।

এছাড়াও তিনি ইতিমধ্যে  দালাল, বাটপারদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন শুরু করেছেন এবং ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ভিতরে আনতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন।

এবিষয় তিনি বলেন, ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সেবা নিতে এসে যদি কোনও কর্মকর্তা-কর্মচারী কোনও ঘুষ চায়, তাহলে গোপনে হলেও আমাকে জানাবেন। আমি ব্যবস্থা নিবো। টাউট, দালাল বা যত বড় ক্ষমতাধারী হোক না কেন, কেউ অপরাধ করলে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। আমি এই অফিসকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে পরিচালনা করতে চাই।’

শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের জমি বুঝিয়ে দিলেন জেলা প্রশাসক

 এর আগে ‘চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক থাকা অবস্থায় তিনি চট্টগ্রামের দিনমজুর, কৃষক-শ্রমিক, মুক্তিযোদ্ধাসহ সকলের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিয়েছেন। এমনকি দুর্নীতিবাজ রাঘব বোয়ালদের গ্রেপ্তার করেছেন।

হাজার কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি দখলমুক্ত হয়েছে তার হাতে। ডিসি মমিনুর রহমান চট্টগ্রামে পাহাড়খেকো, ভূমিদস্যুদের কাছ থেকে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকার মূল্যবান খাসজমি উদ্ধার করেছেন। এসময় সীতাকুণ্ড উপজেলার জঙ্গল সলিমপুরের প্রায় আট হাজার কোটি টাকা মূল্যের ৩১০০ একর সরকারি খাসজমি উদ্ধার।

যুগ যুগ ধরে দখলে থাকা এসব সম্পত্তি উদ্ধার করার কারণেই তার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রও করেছিল প্রভাবশালীরা কিন্তু তাকে কেউ থামাতে পারেনাই। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পর থেকে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন মমিনুর রহমান। ছদ্মবেশে তিনি বিভিন্ন উপজেলা, সার্কেল ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসে আকস্মিক পরিদর্শন করেন।

দ্রুত অভিযান চালিয়ে ভূমি অফিসের দালালদের বিরুদ্ধে জেলহাজতসহ বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন তিনি। এসব অফিসের ১৮৩ জন উমেদারকে বের করে দেওয়ার পাশাপাশি দুর্নীতির দায়ে কয়েকজন ভূমি সহকারী, উপসহকারী কর্মকর্তা ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর বিরুদ্ধেও বিভাগীয় মামলা দিয়েছেন।

এ ছাড়া সরকারি অফিসগুলোতে দালালদের দৌরাত্ম্য রোধ, সার্বিক স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ অধীন সব কার্যালয়ে সহস্রাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।

শুধু তা-ই নয়, চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা পরীর পাহাড় থেকে দুই শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছেন তিনি। ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের পাদদেশ থেকে ৫৮৭টি অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করেছেন। তাঁর উদ্যোগে ২০২০ সালের ৮ ডিসেম্বর উত্তর কাট্টলী মৌজার প্রায় ৩০ একর জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠা অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ করে দখলমুক্ত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এ স্থানটিকে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ ও জাদুঘর নির্মাণের জন্য প্রস্তাব পাঠান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে।

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে চট্টগ্রাম থেকে যুক্ত থাকা যাত্রা মোহন সেনের মহামূল্যবান বাড়িটি উদ্ধার ও সংরক্ষণেও ভূমিকা রয়েছে ডিসি মমিনুরের। ভূমিদস্যুরা বাড়িটি ভেঙে দখল করার অপচেষ্টা চালালে জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তি ও সুধীসমাজের হস্তক্ষেপে ঐতিহাসিক এই বাড়ি দখলমুক্ত করেন। বর্তমানে বাড়িটি সংরক্ষণ করে বিপ্লবী জাদুঘর হিসেবে প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম চলছে।

মানবিক কর্মকাণ্ডেও এগিয়ে রয়েছেন তিনি।সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, ঢাকায় সিদ্দিক বাজার ভবন ধ্বস, বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তসহ হতাহত পরিবারগুলোর পাশে ছিলেন জেলা প্রশাসক।

 

 




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top