রাষ্ট্রায়ত্ত ৫ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন-উত্তরফাঁস

ফাঁসের প্রশ্নে চাকরি পেয়ে প্রশ্নফাঁসে জড়ায় ওরা

ফাঁসের প্রশ্নে চাকরি পেয়ে প্রশ্নফাঁসে জড়ায় ওরা

রাষ্ট্রায়ত্ত ৫ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তরপত্র ফাঁসের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া ৫ ব্যাংক কর্মকর্তা নিজেরাও চাকরি পেয়েছিলেন ফাঁস হওয়া প্রশ্নে। ওই প্রশ্ন কিনতে খরচ হওয়া টাকা ‘উসুল’ করতে তারাও জড়িয়ে পড়েন প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্রের সঙ্গে। এরপর থেকেই তারা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে আসছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।

এ ঘটনায় প্রথমে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন- চক্রের মূল হোতা আহছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি টেকনিশিয়ান মোক্তারুজ্জামান রয়েল, জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা শামসুল হক শ্যামল, রূপালী ব্যাংকের কর্মকর্তা জানে আলম মিলন, পূবালী ব্যাংকের ইমামগঞ্জ শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার মো. মোস্তাফিজুর রহমান মিলন ও চাকরিপ্রার্থী রাইসুল ইসলাম স্বপন।

এই ৫ জনের তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে সাবেক ও বর্তমান ব্যাংক কর্মকর্তাসহ আরও ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন- জনতা ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার এমদাদুল হক খোকন ও সোহেল রানা এবং

প্রশ্নফাঁসের জন্য পরীক্ষার্থী সংগ্রহকারী চক্রের এজেন্ট ঢাকা কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী এবি জাহিদ। এদের মধ্যে সোহেল রানা আগেই জনতা ব্যাংক থেকে চাকরিচ্যুত হয়েছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অনুষ্ঠিত ৫ ব্যাংকের এক হাজার ৫১১টি অফিসার (ক্যাশ) শূন্যপদের নিয়োগ পরীক্ষা হয় গত শনিবার। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকে ১৮৩টি, জনতা ব্যাংকে ৫১৬টি, অগ্রণী ব্যাংকে ৫০০টি, রূপালী ব্যাংকে ৫টি এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে ৭টি পদ রয়েছে। ওইদিন বিকাল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন কেন্দ্রে এমসিকিউ পদ্ধতিতে পরীক্ষা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকার সিলেকশন কমিটির মাধ্যমে প্রশ্নপত্র তৈরি ও পুরো পরীক্ষা সম্পাদনের দায়িত্বে ছিল আহছানউল্লা ইউনির্ভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি। পরীক্ষার দিনই প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছে, তদন্তের স্বার্থে আহছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ কয়েকজনকে অচিরেই তলব করা হবে। এরপর গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে তাদের।

ঘুরে-ফিরে একাধিকবার যারা বাংলাদেশ ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটিতে রয়েছেন, তারাও রয়েছেন নজরদারিতে। প্রয়োজনে এই কমিটির যে কোনো সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এছাড়া আহছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্ন প্রণয়ন, পরীক্ষা নেওয়া এবং পরীক্ষা মূল্যায়ন সংক্রান্ত কমিটির সদস্যদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করবে গোয়েন্দা পুলিশ।

এদিকে প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা এবং রূপালী ও পূবালী ব্যাংকের ২ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। তারা হলেন- শামসুল হক শ্যামল, সোহেল রানা, এমদাদুল হক খোকন, জানে আলম মিলন ও মোস্তাফিজুর রহমান। কিছু নিয়ম-রীতি পেরিয়ে বোর্ড সভার মাধ্যমে শিগগিরই তাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে গতকাল ৩ ব্যাংকের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

অন্যদিকে সোনালী ব্যাংক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার (আইটি) এবং জনতা ও সোনালী ব্যাংকের অ্যাসিসট্যান্ট ডাটাবেস অ্যাডমিনিস্ট্রেটর পদের পরীক্ষা স্থগিত করা হয় গতকাল বৃহস্পতিবার। এই তিন ব্যাংকের দুই পদের লিখিত পরীক্ষা সাময়িকভাবে স্থগিতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তারা জানিয়েছেন সিনিয়র অফিসার (আইটি) পদের পরীক্ষা আগামী শনিবার এবং অ্যাসিসট্যান্ট ডাটাবেস অ্যাডমিনিস্ট্রেটর পদের পরীক্ষা ২০ নভেম্বর হওয়ার কথা ছিল। পরীক্ষার পরবর্তী সূচি যথাসময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট ও গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হবে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) ওয়াহিদুল ইসলাম আমাদের সময়কে জানান, ৫ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসে জড়িত মোট আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া সাক্ষী হিসেবে আরও দুজনকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এই চক্রে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তদন্তের স্বার্থে যে কোনো সময় সন্দেহভাজন যে কোনো ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র এবং নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির তিন ব্যাংকের দুই পরীক্ষা অনিবার্য কারণে স্থগিত করা হয়েছে। গত শনিবারের পরীক্ষার বিষয়ে আহছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। জবাব পেলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এদিকে গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ৬ জনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। তারা হলেন- মুক্তারুজ্জামান রয়েল, শামসুল হক শ্যামল, মোস্তাফিজুর রহমান মিলন, এমদাদুল হক খোকন, সোহেল রানা ও আব্দুল্লাহ আল জাবেদ জাহিদ।




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top