অনাস্থা ভোট: গদি বাঁচাতে সুপ্রিম কোর্টে ইমরান

অনাস্থা ভোট: গদি বাঁচাতে সুপ্রিম কোর্টে ইমরান

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে দেশটির পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে অনুষ্ঠিতব্য অনাস্থা ভোটে তার দল তেহরিক-ই-ইনসাফ পাকিস্তানের (টিআইপি) কোনো এমপি যদি ভোট দেন, সেক্ষেত্রে তিনি আজীবনের জন্য নির্বাচনে দাঁড়ানোর ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা পেতে পারেন।

সোমবার পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টে টিআইপির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে একটি পিটিশন করা হয়েছে। পিটিশনে এই নিষেধাজ্ঞাসহ এ সম্পর্কিত কয়েকটি বিষয়টি উল্লেখ করে আদালতের রায় প্রার্থনা করা হয়েছে বলে সংবাদিকদের জানিয়েছেন দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল খালিদ জাভেদ খান।

খালিদ জাভেদ খান বলেন, ‘যেসব ভিন্নমতাবলম্বী আইনপ্রণেতা তাদের দলের প্রধান নেতার বিরুদ্ধে ভোট দেবেন, তারা আজীবনের জন্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্রে অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন কিনা— সে বিষয়ে আদালতের সিদ্ধান্ত চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি, তাদের ভোট গণনাযোগ্য হবে কিনা— সে বিষয়েও আদালতের মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে।’

পাকিস্তানের পার্লামেন্টারি আইন অনুযায়ী, কোনো এমপি যদি পার্লামেন্টে তার পার্টির বিরুদ্ধে ভোট দেন, সেক্ষেত্রে আইনসভায় তার সদস্যপদ বাতিল হয়; কিন্তু টিআইপির পিটিশনে উল্লেখ করা হয়েছে, আইনসভার সদস্যপদ বাতিলের পাশাপাশি, তাদের ভোটও যেন গণনার অযোগ বলে ঘোষণা করা হয়।

অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা ও পররাষ্ট্র নীতিতে ব্যর্থতার অভিযোগে ২০২০ সাল থেকেই ইমরান খানের পদত্যাগ ও অন্তবর্তী নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে পাকিস্তানের বিরোধী দলগুলো। পার্লামেন্টের প্রধান বিরোধী দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি ও মুসলিম লীগ (নওয়াজ) এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে।

গত ০৮ মার্চ রাজধানী ইসলামাবাদে এই দু’টি দলের নেতৃত্বে ইমরান খানের বিরুদ্ধে বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। সেখানে বিরোধীরা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশে দাবি তোলেন—‘হয় পদত্যাগ করুন, নয়তো অনাস্থা ভোটের মুখোমুখী হোন’।

গত বছর মার্চে বিরোধীদের দাবিতে প্রথমবারের মতো অনাস্থা ভোটের মুখোমুখী হয়েছিলেন ইমরান খান, তবে সেবার খুবই অল্প ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়ে উৎরে গিয়েছিলেন তিনি। পাকিস্তানের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে আয়োজিত সেই আস্থা ভোটে জয়ের জন্য ইমরানের ১৭২টি ভোটের প্রয়োজন ছিল এবং তিনি পেয়েছিলেন ১৭৬ টি ভোট।

চলতি বছর ফের আস্থা ভোটের মুখে পড়তে হচ্ছে ইমরান খানকে। পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গকে জানিয়েছেন, আগামী ২৮ থেকে ৩০ মার্চের মধ্যে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে হতে পারে এই আস্থা ভোট।

এবার অবশ্য অনাস্থা ভোটের বৈতরণী পেরোনো কঠিন হবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর জন্য। কারণ, তেহরিক-ই-ইনসাফের নেতৃত্বাধীন ৫ দলের জোট সরকারের মন্ত্রিসভা থেকে ইতোমধ্যে ৩টি শরিক দল বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

এই তিন দল হলো মুসলিম লীগ— কায়েদ পার্টি, বেলুচিস্তান আওয়ামি পার্টি ও মুত্তাহিদা কওমী মুভমেন্ট। অবশ্য মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিলেও জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে এখনও তিন দলের নেতাদের মধ্যে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমগুলো।

ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে মোট আসনসংখ্যা ৩৪২টি। এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা কোনো রাজনৈতিক দল বা জোটকে অন্তত ১৭২টি আসন পেতে হবে। বর্তমানে অ্যাসেম্বলির ১৭৮টি আসনে আছেন টিআইপি ও দলটির নেতৃত্বাধীন জোটের সদস্যরা, বাকি ১৬৩ টি আসনে আছেন বিরোধি দলগুলোর এমপিরা।

এমন পরিস্থিতিতে নিজ দলের এমপিরা যেন প্রধান নেতার বিরুদ্ধে ভোট না দেন, সেজন্য সতর্কবার্তা হিসেবে সুপ্রিম কোর্টে এই পিটিশন জমা দিল টিআইপি হাইকমান্ড।

সূত্র: রয়টার্স




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top