429

04/17/2024 ছাবেরা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে দেশে ফিরলো ১৫ জেলে

ছাবেরা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে দেশে ফিরলো ১৫ জেলে

নিজস্ব প্রতিবেদক

৩০ এপ্রিল ২০২৩ ০৪:৫১

বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে গত ২৫ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং এর কবলে পড়েন ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার নুরাবাদ আহমেদপুর, চরকমলী ও আবদুল্লাহপুর ইউনিয়নের পাঁচটি ট্রলারের প্রায় শতাধিক জেলে। ট্রলার ডুবির ফলে দুই রাত তিন দিন গভীর সাগরে ভাসতে থাকেন তারা। ক্ষুধা, পানি পিপাসা আর আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে পড়েন এদের অনেকে। চোখের সামনে মারাও যান কয়েকজন।

তবুও কারো কিছুই করার ছিল না। একপর্যায়ে বেশ কয়েকজন জেলে ভাসতে ভাসতে ভারতের সীমান্তে গিয়ে উঠেন। ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চিকিৎসা শেষে তাদের জেলখানায় প্রেরণ করে। ছয় মাস হয়ে গেলেও তাদের ফেরত আনা সম্ভব হচ্ছিল না। পরিবারও কোন উপায়ন্তু পাচ্ছিলেন না।

একপর্যায়ে বিষয়টি জানতে পারেন সাবেক সচিব ও ঢাকা অফিসার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন। পরে তার সহযোগিতায় এবং তার মায়ের নামে গড়া প্রতিষ্ঠান ছাবেরা ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ১৫ জেলেকে বাংলাদেশে ফেরত আনা হয়েছে। শুক্রবার রাতে দেশে আসতেই তাদের আকড়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা।

শনিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর রুনি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাবেক সচিব ও ঢাকা অফিসার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন বিষয়টি তুলে ধরেন। সংবাদ সম্মেলনে চরফ্যাশন উপজেলার নুরাবাদ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান, ব্যবসায়ী মেজবাহ উদ্দিন টিপু, কেন্দ্রীয় বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার সভাপতি ইয়াছিন মোহাম্মদ ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য রিয়াজ সহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। এসময় দেশে ফেরা ১৫ জেলে সাগরে ভাসার সেই ভয়াল স্মৃতির বর্ণনা করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

ছাবেরা ফাউন্ডেশনের সভাপতি মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ট্রলার ডুবির ঘটনা অক্টোবরের ২৫ তারিখে ঘটলেও তিনি জানতে পারেন প্রায় ২০ দিন আগে। নিখোঁজ জেলেদের পরিবার একমাত্র উপার্জক্ষম ব্যক্তির সন্ধান না পেয়ে তারাও শোকের সাগরে ভাসতে থাকেন। অসহায় ১৫টি পরিবারের কথা চিন্তা করে তিনি নিজ উদ্যোগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ভারত বাংলাদেশ হাইকমিশনের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং ভারতে জেলখানা থেকে নিখোঁজদের মধ্যে ১৫ জেলেকে দেশে আসার ব্যবস্থা করেন। বাকি নিখোঁজদের সন্ধান ও ফেরত আনার প্রচেষ্টাও অব্যাহত রয়েছে।

এক্ষেত্রে সরকারের কাছ থেকেও সহযোগিতা আশা করছি। সাবেক এই সচিব বলেন, ১৫ জেলেকে ফেরত আনা, থাকা-খাওয়াসহ সব খরচ তার মায়ের নামে গড়া প্রতিষ্ঠান ছাবেরা ফাউন্ডেশন বহন করেছে। আর্থিক ক্ষতি ও শোক কাটিয়ে এরা যাতে কাজে ফিরতে পারে, সেই ব্যবস্থাও করবে ছাবেরা ফাউন্ডেশন। প্রতিষ্ঠানটির অর্থায়নে এতিমখানা, স্কুল রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি সমাজের পিছিয়ে পড়া ব্যক্তিদের আর্তমানবতার সেবায় কাজ করে যাচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে ভারত থেকে ফেরত আসা জেলে দুলাল মিয়া ও ইমাম হোসেন সেই ভয়াল স্মৃতির বর্ণনা দেন। এ ঘটনায় ইমাম হোসেনের তিন ভাইসহ পরিবারের পাঁচজন নিখোঁজ রয়েছেন। তার ধারণা, এরা কেউ-ই বেঁচে নেই। ইমাম বলেন, পরিবার অনেক চেষ্টা করেও তাদের ভারত থেকে ফেরত আনতে পারছিল না।

পরে সাবেক সচিব মেজবাহ উদ্দিন স্যার বিষয়টি শোনেন। মূলত তার মানবিক উদ্যোগে ও সহায়তায় আজ আমরা পরিবারের কাছে আসতে পেরেছি, এমনটি বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন ইমাম হোসেন।

দুলাল মিয়া জানান, তাদের ট্রলারে মোট ১৯ জন ছিলেন। ঘূর্ণিঝড়ে তাদের ট্রলারটি ডুবে যাওয়ার পর কূলকিনারা বিহীন সাগরে ভাসতে থাকেন সবাই। বাতাস আর ঢেউয়ের কারণে পেটে পানি চলে যায়। কিছু ধরে যে ভাসবো, সেই উপায় ছিল না। একপর্যায়ে একটি কলা গাছ সামনে পড়লে তা ধরে ৬ জন ভাসতে থাকি। বাকিরা তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। হাত দিয়ে কিছু ধরলেই কেটে যেতো।

শরীরের বিভিন্ন স্থানের চামড়া উঠে গেছে। ঘুম যেতে না পারায়, ক্ষুধায় আর পানির অভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন তারা। চোখের সামনে কয়েকজনকে মারা যেতেও দেখেছেন তিনি। কিন্তু তখন নিজের বেঁচে থাকাটাই যেন বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজ আমরা যারা বেঁচে ফিরেছি, তারাও মরতে মরতে বেঁচে গেছি। এভাবে প্রায় ৭০০ কিলোমিটার সাগরে ভেসে ভারতের তীরে গিয়ে উঠি। ১০ দিন পর জ্ঞান ফিরে। কাঁদতে কাঁদতে দুলাল আরো বলেন, সেখানকার লোকজন পরিবারের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ করে দেন।

পরিবারের সবাই হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন। দেশে আসার জন্য মন ছটফট করছিল। কিন্তু কোন উপায় পাচ্ছিলাম না। অবশেষে মেজবাহ স্যারের উদ্যোগে পরিবারের কাছে আসতে পেরেছি। তা না হলে আমাদের হয়তো ভারতের জেলখানায় মানবেতর জীবন যাপন করতে হতো।

 

সম্পাদক:
যোগাযোগ: ৩২/২, প্রিতম জামান টাওয়ার, (১১ তলা), পুরানা পল্টন, ঢাকা - ১০০০
মোবাইল: +৮৮ ০১৭৮৭ ৩১৫ ৯১৬
ইমেইল: infobanglareport@gmail.com