359

04/20/2024 জাল সনদ ও নম্বরপত্রের ফটোকপি দিয়ে বিমানে চাকরি

জাল সনদ ও নম্বরপত্রের ফটোকপি দিয়ে বিমানে চাকরি

বাংলা রিপোর্ট

১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১২:০৮

পড়ালেখা করেছেন উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত। কিন্তু একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ’র জাল সনদ ও নম্বরপত্রের ফটোকপি দিয়ে চাকরি করছেন। চাকরির আবেদনপত্রে যে স্থায়ী ঠিকানা দিয়েছেন সেটাও মিথ্যা। পুলিশের একটি গোয়েন্দা সংস্থা এমন প্রতিবেদন দিলেও তিনি চাকরিতে বহাল। এই ব্যক্তি হলেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস লিমিটেডের গ্রাউন্ড সার্ভিস অ্যাসিসটেন্ট মাইনুল আহমেদ। বর্তমানে হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্মরত। তার কর্মী নম্বর-৫৩০২৭।

মাইনুলের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, সে বিষয়ে দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের কেউ কথা বলছেন না।

অভিযোগ রয়েছে, বড় অঙ্কের উৎকোচের মাধ্যমে ওই পদে চাকরি নিয়েছেন মাইনুল। ফলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনটি মাইনুলের পক্ষে দেওয়ার জোর তদবিরও ছিল বিমানের কিছু অসাধু কর্মকর্তার। তবে শেষ পর্যন্ত গত বছরের অক্টোবর মাসে সঠিক প্রতিবেদনই দিয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাটি। এর পরও মাইনুলের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বিমান কর্তৃপক্ষ।

গত মঙ্গলবার খোঁজ নিয়ে জানা গেছে মাইনুল সেদিনও কাজ করেছেন। এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিমানের গ্রাউন্ড সার্ভিসে কর্মরত এক কর্মকর্তা  বলেন, ‘বিষয়টি খুবই সেনসেটিভ হওয়ায় আমরা কিছু বলতে পারি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘জাল সনদপত্রে চাকরি নেওয়ার বিষয়টি একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে প্রকাশ পাওয়ার পরও কেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না তা বোধগম্য নয়।’

জাল সনদে চাকরির বিষয়ে জানতে গত ৩০ জানুয়ারি মাইনুল আহমেদকে ফোন করলে, তিনি এ প্রতিবেদকের প্রশ্ন শোনার পর কোনো মন্তব্য করবেন না বলেই ঠাস করে ফোনের সংযোগ কেটে দেন। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় তাকে একাধিকবার ফোন করলেও আর রিসিভ করেননি। মোবাইল ফোনে খুদেবার্তা পাঠালেও কোনো সাড়া দেননি।

এ বিষয়ে জানতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপক (গ্রাউন্ড সার্ভিসেস) গোলাম সারওয়ার এবং মহাব্যবস্থাপক (পাবলিক রিলেশনস) তাহেরা খন্দকারসহ একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ফোন করলে তারা ফোন ধরেননি। মোবাইল ফোনে খুদেবার্তা পাঠালেও তারা কোনো সাড়া দেননি।

উপ-ব্যবস্থাপক (গ্রাউন্ড সার্ভিস) তন্ময় কান্তি বিশ্বাস  বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। সনদপত্র জালের বিষয়টি আপনার কাছ থেকেই প্রথম জানলাম।’ তিনি বলেন, ‘এখানে শিফ্টভিত্তিক অনেকেই চাকরি করেন। মাইনুল নামের কাউকে নাম শুনে চিনতে পারছি না।’

গোয়েন্দা প্রতিবেদন ও  অনুসন্ধানে দেখা গেছে, চাঁদপুর সদরের জি টি রোড দক্ষিণের বাসিন্দা এ কে এম মেজবাহ উদ্দিন আহম্মেদের ছেলে মাইনুল আহমেদ। তিনি ২০০৭ সালে চাঁদপুরের আমিন একাডেমি থেকে মাধ্যমিক ও ২০০৯ সালে ঢাকা কমার্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর ২০১০ সালে ভর্তি হন ঢাকার ‘বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজিতে (বিইউবিটি) ব্যাচেলর অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে (বিবিএ)। কিন্তু সেখানে পড়ালেখা শেষ করেননি। বিমানের ১১তম গ্রেডের ‘গ্রাউন্ড সার্ভিস অ্যাসিসটেন্ট’ পদে চাকরির আবেদনপত্রে নিজেকে বিইউবিটি থেকে চার বছর মেয়াদি বিবিএ পাস বলে উল্লেখ করেন। আবেদনপত্রে বিবিএতে সিজিপিএ ৪ এর মধ্যে ৩.১০ পেয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন। পরবর্তী সময়ে ওই পদে নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে গত বছরের ১২ জুন চাকরিতে যোগদানের আগে অন্যান্য কাগজপত্রের সঙ্গে বিইউবিটি থেকে বিবিএ পাসের একটি সনদপত্র ও নম্বরপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি জমা দেন মাইনুল। চাকরির আবেদনপত্রে স্থায়ী ঠিকানা দিয়েছেন রাজধানীর দারুস সালাম থানাধীন খালেক সিটির বি-২৭/এ নম্বর বাসার ঠিকানা।

পরবর্তী সময়ে নিয়ম অনুযায়ী মাইনুলের চাকরির আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া সব কাগজপত্র যাচাই-বাছাই, তার বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি বা রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা আছে কি না তা যাচাইয়ে পুলিশকে অনুরোধ করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। সেই অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তে নেমে মাইনুলের বিবিএ জাল সনদের তথ্য পায় পুলিশের একটি গোয়েন্দা সংস্থা।

এ বিষয়ে ওই গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি (বিইউবিটি)-এর কাছে মাইনুলের সনদের বিষয়ে জানতে চাইলে বিইউবিটির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এ বি মো. বদরুদ্দোজা মিয়া স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে জানানো হয়, ‘মাইনুল আহমেদের প্রভিশনাল সার্টিফিকেট (সাময়িক সনদপত্র) এবং ট্রান্সক্রিপ্টের (নম্বরপত্র) ফটোকপি সম্পূর্ণ ভুয়া। বিইউবিটি থেকে এ ধরনের কোনো কাগজপত্রাদি দেওয়া হয়নি।’

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গোপনে, প্রকাশ্যে ও স্থানীয়ভাবে অনুসন্ধান করে প্রার্থীর (মাইনুল আহমেদ) বিরুদ্ধে বিরূপ তথ্য পাওয়া গেল যে তিনি ভুয়া সনদপত্র দিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস লিমিটেডে গ্রাউন্ড সার্ভিস অ্যাসিসটেন্ট হিসেবে চাকরি করে আসছেন। তার ২০১৪ সালের বিবিএ পাসের সনদ যাচাইয়ের জন্য বিইউবিটিতে (ইউনিভার্সিটি) সরেজমিনে উপস্থিত হয়ে তদন্তকালে তার বিবিএ পাসের শিক্ষা সনদ নকল বলে কন্ট্রোলার প্রত্যয়নপত্র দেন।

এ ছাড়া প্রার্থীর বর্তমান ঠিকানা বি-২৭/এ, খালেক সিটি, থানা- দারুস সালাম, ঢাকা- স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে পুলিশের তদন্ত ফরমে (ডিআরে) উল্লেখ থাকলেও প্রকৃতপক্ষে এটি প্রার্থীর স্থায়ী ঠিকানা নয়। সরেজমিনে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, প্রার্থীর স্থায়ী ঠিকানার ফ্ল্যাটটি তার ভগ্নিপতি মো. রাশেদুল হাসান চৌধুরীর। তার স্থায়ী ঠিকানা মূলত চাঁদপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ বিষ্ণুদি এলাকার জিটি রোডের হোল্ডিং নম্বর-৩২৪।

সম্পাদক:
যোগাযোগ: ৩২/২, প্রিতম জামান টাওয়ার, (১১ তলা), পুরানা পল্টন, ঢাকা - ১০০০
মোবাইল: +৮৮ ০১৭৮৭ ৩১৫ ৯১৬
ইমেইল: infobanglareport@gmail.com