টুইস্টে ভরা কাব্যগ্রন্থ ‘ভাবনা নয় ঘুম আসে’

টুইস্টে ভরা কাব্যগ্রন্থ ‘ভাবনা নয় ঘুম আসে’

একুশে বইমেলা ২০২৩-এ চারুলিপি প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হবে হালের অন্যতম প্রকরণসিদ্ধ কবি মোরশেদুল ইসলাম এর নতুন কাব্য "ভাবনা নয় ঘুম আসে"। পাঁচ ফর্মার বইটিতে মোট ৭২ টি সনেট স্থান পেয়েছে। কবিতা তার পাঠকদের কীভাবে ভাব, ভাষা, ছন্দ, অলঙ্কার ও দ্যোতনা দিয়ে ভাবায় তাই দেখা যাবে পরতে পরতে। ভাবনার বদলে কবি ঘুমের প্রত্যাশা করেও চমকপ্রদভাবে পাঠককে ভাবনার পাকে ফেলে দেন :
“মুখ বন্ধ করলেই কি কথা থেমে যায়?/ প্রতিবাদ ঢেউ তোলে পুরো দেহটাতে!" (সনেট ১৭)

কবিতাগুলোয় প্রতীক ও উপমার ব্যবহারে কবি তার যথেষ্ট  মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন। ৩৯ নং সনেটে বলেছেন:
"পাতাগুলো নেচে চলে বাতাসের সুরে।/ যদি আমার নির্দেশ না করো পালন,/ না নাচো আমার তালে, ছন্দের পতন/ হয় যদি কোনোক্রমে, খাবো কুঁড়ে কুঁড়ে/ লাত্থি দিয়ে নিয়ে যাব এক্কেবারে দূরে!"

“তোমার দেহের কড়া ঘ্রাণ ঠিক পাশের বাড়ির/ ডাল রান্নার মতন দোলা দেয় নাকের ভিতরে!” ( সনেট ০২)

উত্তরাধুনিক কবিতার সরল রৈখিক ব্যাখ্যা করা দুরূহ ব্যাপার; এখানে ভাবনার বহু আঙ্গিক থাকে। তবু এ কাব্যে অযাচিত দুর্বোধ্যতা নেই। আছে ভাবনার নৈর্ব্যক্তিক ও সার্বজনীন স্রোতে হারিয়ে যাওয়ার মতো ব্যাপার। পাশাপাশি, কবিমানসের সাথে পাঠকের বিচ্ছিন্নতার জো নেই।
‘দিনশেষে আমরা সবাই গল্প হয়ে যাব:/ কেউ রবে ইতিহাসে কেউবা উপন্যাসে!’ ( সনেট ৪৪)

পেত্রার্কিয় সনেটের অন্ত্যমিল বিন্যাসযুক্ত কবিতাগুলোতে অমিত্রাক্ষর ছন্দেরই আধিক্য লক্ষ্যণীয়। পয়ারের পাশাপাশি মহাপয়ারের চালও দেখা যায় সমানতালে।
‘একদিন হারিয়ে যাবে সব, দূরত্ব সাধবে শূন্যতা/ এই আমাদের মাঝে; কাকতালীয় ঘটনায়ও ভুলে/ হবে না আমাদের দেখা; বহতা সময়ের কূলে/ মৃত্যু হবে একজনের, অপরে জানতেও পারবে না তা’ (সনেট ৩৬)

মূলধারার সাহিত্যিক ঐতিহ্যের সাথে সাথে আধুনিক, বাস্তবিক এবং পরাবাস্তববাদী গঠন ও মননশীলতার বহুমাত্রিক টুইস্টে ভরপুর তরুণ কবি মোরশেদুল ইসলাম এর “ভাবনা নয় ঘুম আসে” কাব্যটি। কবিতাপ্রেমী চিন্তাশীল পাঠক হৃদয়ের জন্য ঘোরলাগা অনুপম একটি কাব্যগ্রন্থ; যেখানে ব্যক্তিক ও নৈর্ব্যক্তিক উভয় ধরনের রস আস্বাদনে তৃপ্ত হবে পাঠক হৃদয় এবং ডুবে যাবে ভাবনার ঢেউয়ে।

বইয়ের প্রচ্ছদ এঁকেছেন ধ্রুব এষ।

•লেখক: সংবাদকর্মী




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top