মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলা

স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হতে কোটি টাকা নিয়ে দৌড়ঝাপ প্রবাসীর

স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হতে কোটি টাকা নিয়ে দৌড়ঝাপ প্রবাসীর

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে জোরেশোরে মাঠে নেমেছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ। চলছে সারাদেশে জেলা-উপজেলা-থানা-ইউনিয়ন-ইউনিট সম্মেলন। এদিকে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি ঘোষণার আগেই কোটি টাকার বাণিজ্যের খবর ছড়িয়ে পড়ছে কেন্দ্র থেকে উপজেলার সকল নেতাকর্মীর মুখে মুখে। এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা। আর্থিক লেনদেনের খবরে ক্ষোভ প্রকাশ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক তৃণমূল নেতাকর্মী বলেন, হঠাৎ একটা লোক উড়ে এসে জুড়ে বসবে আবার নেতা হয়ে যাবে, এভাবে নেতা হলে দলটা ধ্বংস হয়ে যাবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অভিযোগ উঠেছে, তৃণমূল স্বেচ্ছাসেবক লীগে ‘পকেট কমিটি’ ও ‘পদবাণিজ্যের’। ফলে সংগঠন শক্তিশালী নয়,  বরং দুর্বলই থেকে যাচ্ছে বলে দাবি করছেন বিভিন্ন এলাকার তৃণমূল নেতাকর্মীরা। 

স্থানীয় সূত্রে আরো জানা যায়, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু ঘনিষ্ঠ আমেরিকান প্রবাসী আরিফ হোসেন সুমনের কাছ থেকে বড় অংকের টাকা নিয়ে তাকে সভাপতি করবেন এমন আভাস পাওয়া গেছে। গাজী মেজবাউল হক সাচ্চুর পরিবারও আমিরিকায় থাকে, সেই সখ্যতার মধ্যেই টাকার বাণিজ্যের মাধ্যমে হঠাৎ করে রাজনীতিতে আসা সুমন হয়ে উঠেন প্রভাবশালী প্রার্থী।

এবিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু বলেন, এটা মোটেও সত্য না। এক শ্রেণির লোক এই মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে। একটা ছেলে সে যদি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে সে প্রার্থী হতে পারে। একটা ছেলে প্রার্থী হওয়া মানেই সে নেতা হয়ে যাবে, এটা ঠিক না। ইচ্ছে হলে আপনিও হতে পারেন। আমার জন্ম ঢাকা শহরে। আপনারা আমার সমন্ধে খোঁজখবর নিয়ে দেখেন। আল্লাহপাক যেন আমাকে হারাম খাওয়াইয়া মৃত্যু না দেয়।
তিনি বলেন, সুমন আমার পূর্ব পরিচিত সেটা সত্য, যোগ্য প্রার্থী হলে সে আমেরিকান প্রবাসী, না কানাডার সেটা বিষয় না। আমি তাকেই বানাবো। তিনি আরও বলেন, মানুষ তার পেটের তাগিদে বিদেশে যাইতেই পারে। যদি যোগ্য হয় তবেই সে প্রার্থী হতে পারবে। তার বাবা-মা কী করে? ও আগে ছাত্রলীগ করতো কি-না? তার আত্মীয়-স্বজন স্বাধীনতা বিরোধী কি-না? কেউ বিএনপি বা জামাত করছে কিনা, এসব যাচাই-বাছাই করা হবে। যারা প্রার্থী হবে তাদের নিয়ে দুইটি গোয়েন্দা সংস্থা রিপোর্ট বের করবে। কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্তরাও যাচাই-বাছাই করে কমিটি দিবে।

অপর দিকে আহসান উল্লাহ রয়েল কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের কয়েকজন নেতার মাধ্যমে বিপুল পরিমান টাকা ছড়ান, যার ভাগ কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবুর পকেটেও গিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এবিষয়ে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু বলেন, অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, স্বেচ্ছাসেবক লীগকে কখনোই এসব অভিযোগ দেওয়ার সুযোগ নাই। এরকম যদি কোনো ট্রাক রেকর্ড থাকে আপনারা খুঁজে দেখতে পারেন। আমরা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করি। আমরা নিজেরাই পারিবারিকভাবে স্বচ্ছল। আর আমরা রাজনীতি করে ব্যবসা করি। এরকম অভিযোগ আপনার কাছে প্রথম শুনলাম। আমরা বাংলাদেশ থেকে এমন কোনো কমিটি দিচ্ছি, এটা হওয়ার কোনো সুযোগ নাই। আর যদি কোনো সত্য খবর আপনি পেয়ে থাকেন, তবে যদি সংগঠন আমার বিরুদ্ধে যেকোনো ধরণের ব্যবস্থা নেন, আমি তার জন্য প্রস্তুত আছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের বিশ্বাস করে দায়িত্ব দিয়েছেন, আমরা বিশ্বসতা রক্ষার চেষ্টা করতেছি। আজ তিনবছর যাবত আমাদের কমিটি আছে। এ তিন বছরে এমন কোনো অভিযোগ উঠেনি, উঠার সুযোগও নাই।

এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ জেলা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ তাজুল ইসলাম পিন্টু জানান, এ ধরণের কোনো অভিযোগ বা তথ্য-উপাত্ত আমরা শুনি নাই। আমাদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃবৃন্দের মধ্যে কোনোপ্রকার অসন্তোষ নাই। আমরা তো এখনো কমিটি নিয়ে বসিই নাই।

এদিকে, পদবাণিজ্য নিয়ে শুধু তৃণমূল নেতাকর্মীরাই নন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও পদবাণিজ্য নিয়ে মুখ খুলছেন। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি দলের বিভিন্ন স্তরে আর্থিক লেনদেনের খবরে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আপনারা দলটাকে বাঁচান। টাকা-পয়সার লেনদেন—এগুলো বন্ধ করেন। কমিটি করতে টাকা লাগবে, এটা বিএনপির হতে পারে, আওয়ামী লীগ এ চর্চা করতে পারে না। টাকা-পয়সা নিয়ে মনোনয়ন—এ চর্চা চিরতরে বন্ধ করতে হবে। বিষয়টি দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ।’

 




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top