দেশি মাওলানা ওয়াজ করেন হিন্দিতে, আছে দোভাষীও

আবুল হাসান কাসেমী

বাংলাদেশে জন্ম, পুরো পরিবার দেশেই থাকে। নিজের পরিচালিত মাদ্রাসাও রয়েছে গ্রামে। একটা মসজিদে ইমামতি করেন। শুদ্ধ বাংলায় কথাও বলতে পারেন। এর পরও দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দি ভাষায় ওয়াজ করেন। আয়োজকদের থেকে নেন বড় অঙ্কের টাকা। এসব ওয়াজ অনুবাদ করে বাংলায় শোনানোর জন্য রেখেছেন দোভাষী। শ্রোতারা জানেন বুজুর্গ এ আলেমের বাড়ি ভারতের রাজধানী দিল্লিতে। সেখানে মস্তবড় একজন ইসলামী আলোচক তিনি। তবে  অনুসন্ধানে মিলেছে ধর্মের নামে ব্যবসা করা এ প্রতারকের আদ্যোপান্ত।

আলোচিত এ ধর্ম ব্যবসায়ীর নাম মুফতি আবুল হাসান কাসেমী। এলাকায় সবাই চেনেন তুহিন নামে। তার গ্রামের বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার নাশেরা নামক গ্রামে।

গত দুই বছর দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দিভাষী ইসলামী বক্তা মুফতি আবুল হাসান কাসেমীর ব্যাপক নামডাক ছড়িয়ে পড়ে। দিল্লি জামে মসজিদের ইমাম পরিচয় দেওয়া আবুল হাসান কাসেমী সহকারীর পাশাপাশি রেখেছেন দোভাষীও। বিভিন্ন মাহফিল আয়োজক কমিটি এ বক্তার শিডিউলও পান না। তবে আলোচিত এ বক্তা বাংলাদেশেরই নাগরিক। গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার নাশেরা নামক গ্রামের আলফাজ উদ্দীনের ছেলে তিনি। সেখানেই একটা নিজস্ব মাদ্রাসা রয়েছে তার। পাশাপাশি গত কয়েক বছর বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি মাদ্রাসায় চাকরিও করেছেন। বর্তমানে নিজস্ব মাদ্রাসা পরিচালনার পাশাপাশি গাজীপুরের মারকাজুস সুন্নাহ নামের একটি কওমি মাদ্রাসার প্রধান মুফতি এই আবুল হাসান কাসেমী।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আবুল হাসান কাসেমী পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যই নানা প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত। ভারত থেকে কাপড় এনে ব্যবসা করেন। ভারতে যাওয়ার সুবাদে আবুল হাসান ওরফে তুহীনও লাগেজে করে ট্যাক্স ছাড়াই মালপত্র এনে বিক্রি করেন। এলাকার অনেকেই এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। এ ছাড়া ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এজেন্টের কথা বলে বিভিন্ন মানুষের থেকে টাকা নিয়ে পলাতক রয়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা। এ ঘটনায় মামলাও চলছে।

আবুল হাসান কাসেমী।
বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি মারা গেছেন
তার প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছে এমন দুজন ছাত্রের সঙ্গে কথা হয় । তারা প্রত্যেকেই বলে আবুল হাসানকে মূলত তুহিন নামে সবাই চেনে। তিনি একসময় ড্রাইভিং পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এ ছাড়া কোরবানির সময় গরুর ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থাকেন। বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আয়ের অনেক অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

সাইফুল ইসলাম নামে একজন বলেন, আবুল হাসানের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে নানা প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। দুটি মামলাও চলমান। ভারতের দেওবন্দে কয়েক বছর পড়াশোনা করেছেন। এরপর দেশে ফিরে মাদ্রাসা পরিচালনা ও ইমামতির দায়িত্ব পালন করতেন। গত দুই বছর তিনি হঠাৎ হিন্দি ভাষায় ওয়াজ শুরু করেছেন। দূর-দূরান্তে ভারতীয় পরিচয় দিয়ে ওয়াজ করেন।

বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ঘেঁটে দেখা গেছে, দেওবন্দ থেকে দেশে ফিরে এসে তিনি বাংলা ভাষায় বিভিন্ন স্থানে ইসলামী আলোচনা করতেন। ইউটিউবভিত্তিক বিভিন্ন আলোচনা অনুষ্ঠানেও তিনি বাংলা ভাষায় সাবলীলভাবে ইসলামের নানা বিষয়ে আলোচনা করছেন। তবে ২০২১ সাল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারতীয় পরিচয়ে ওয়াজ শুরু করেন। বিশেষ করে সিলেটের বিভিন্ন অঞ্চল ও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় তার পরিচিতি বেশি।

চলতি বছর সর্বশেষ হবিগঞ্জের এক ওয়াজ-মাহফিলে দেখা যায়, আবুল হাসানের হিন্দি ভাষার ওয়াজ বাংলায় অনুবাদ করে উপস্থিত মানুষকে শোনাচ্ছিলেন একজন দোভাষী। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই দোভাষীর নাম মুফতি এনামুল হক। তিনি বসুন্ধরায় অবস্থিত জামিয়াতুল আবরার বাংলাদেশ নামের প্রতিষ্ঠানের মুহাদ্দিস। এ বিষয়ে মুফতি এনামুল হকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে মুফতি এনামুল হকের বরাতে প্রাক্তন ছাত্র আবু বকর বলেন, হুজুরের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি না বুঝেই একজন প্রতারকের খপ্পরে পড়েছেন। হুজুরকে বলা হয়েছিল বক্তা ভারতীয় এবং তিনি বড় আলেম।

আবুল হাসান কাসেমী।
বান্দরবানে সনাতন ধর্মাবলম্বী পুরোহিতদের ৯ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ শুরু
এ বিষয়ে জানতে মুফতি আবুল হাসান কাসেমীর মোবাইল নম্বরে ফোন দিলে তিনি নিজেকে আবুল হাসানের পরিচিত বলে পরিচয় দেন। এই নম্বরটি নিজের এবং আবুল হাসান মাঝেমধ্যে এই নম্বর ব্যবহার করেন বলে জানান তিনি। তবে এই নম্বরের হোয়াটসঅ্যাপে আবুল হাসানের ছবি রয়েছে। এমনকি এই নম্বরেই খোলা হয়েছে আবুল হাসানের ফেসবুক আইডিও।

এ সময় তিনি বলেন, আবুল হাসান ভারতের দেওবন্দে পড়াশোনা করেছেন। সেখানেই বিয়ে করেছেন। ভারতের নাগরিকত্বও রয়েছে তার। মাঝেমধ্যে দেশে আসেন। হিন্দিতে ওয়াজ করেন। সবাই যেহেতু আপত্তি তুলেছে, আর করবেন না। তিনি বলেন, পরিবারের সবাই বাংলাদেশেই থাকে। মাদ্রাসা পরিচালনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাদ্রাসা আবুল হাসানই প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তবে এখন পরিবারের অন্য সদস্যরা পরিচালনা করেন। এরপর আবুল হাসানের বক্তব্য সংবলিত একটি ভিডিও পাঠান সংশ্লিষ্ট ওই ব্যক্তি। এতে ভারতের নাগরিকত্ব ও বিয়ের প্রমাণাদি উপস্থাপন করেন আবুল হাসান।




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top