ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে কলেজের অধ্যক্ষ আওয়ামী লীগ নেতা

শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া থানার নশাসন ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন তালুকদার

 বিরুদ্ধে জাল সনদপত্র দিয়ে প্রধান শিক্ষক থেকে অধ্যক্ষ হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ আছে স্কুলের জায়গা দখল করে তিনি বহুতল বাড়ি বানিয়েছেন। স্কুলের জায়গা দখল করে তালুকদার মার্কেট বানিয়েছেন। এছাড়া পুকুর ভরাট করে প্রায় অর্ধশত দোকান বানানোর অভিযোগ আছে ডগ্রী ইসমাইল হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন তালুকদারের বিরুদ্ধে। এছাড়া ডগ্রী বাজারে মাদবরকান্দি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গা দখলেরও অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগ আছে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ স্টাডিজের সার্টিফিকেট নিয়েছেন। সার্টিফিকেট জালিয়াতি ও বাণিজ্য করার অপরাধে বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট দিয়ে ডগ্রী ইসমাইল হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক থেকে স্কুলটির কলেজ শাখার অধ্যক্ষ হয়েছেন। আছেন প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষ দুই পদেই। দেলোয়ার তালুকদারের শিক্ষা জীবনের সকল ক্ষেত্রে তৃতীয় শ্রেণি। সকল পরীক্ষায় থার্ড ক্লাস পাওয়া ব্যক্তি কীভাবে প্রধান শিক্ষক এ নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে।

এমএ স্টাডিজের সার্টিফিকেট জালিয়াতির অভিযোগে দেলোয়ার তালুকদারের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ইতিমধ্যে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এই সার্টিফিকেট নিয়ে তদন্ত করেছে। তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে সার্টিফিকেট জাল। জাল সার্টিফিকেট নিয়ে কীভাবে চাকরি করছেন এই প্রশ্ন খোদ ইউজিসির।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, সাবেক সংসদ সদস্য কর্ণেল শওকত আলীর বিশেষ অনুগত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া যায়নি।

দেলোয়ার তালুকদারের নানান অনিয়মের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকে একটি অভিযোগ জমা পড়েছে। চার পৃষ্ঠার সেই অভিযোগ বলা হয়েছে, দেলোয়ার হোসেন তালুকদার ওরফে দেলু তালুকদার সাং-ডগ্রী বাজার, থানা নড়িয়া জেলা শরীয়তপুর একজন দুর্নীতিবাজ, প্রতারক, সরকারী সম্পদ আত্মসাৎকারী ও ভূমিদস্যু। তিনি ডগ্রী ইসমাইল হোসেন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষ। প্রধান শিক্ষক থেকে অধ্যক্ষ হওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের কাছে তিনি ভুল তথ্য ও ভুয়া সার্টিফিকেট প্রদান করেছেন। দেলোয়ার হোসেন তালুকদার ওরফে দেলু তালুকদার একজন সাধারণ বিএ পাশ। সকল পরীক্ষায় তিনি তৃতীয় বিভাগ প্রাপ্ত। যা দিয়ে প্রধান শিক্ষক পদে থাকা কঠিন। তিনি এমএ পরীক্ষায় জাল সার্টিফিকেট ব্যবহার করে চাকরী করে চলছেন। তিনি প্রতারণামূলকভাবে ঢাকার বাড়ী নাম্বার ২১, রোড ৯/এ, ধানমন্ডির বিতর্কিত দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের একটি সনদ সংগ্রহ করেন। যা জাল ও ভুয়া। শিক্ষক যেখানে রাষ্ট্রের বাতিঘর সেখানে জাল সনদ দিয়ে এই শিক্ষক কিভাবে শিক্ষার্থীদের আলোকিত মানুষ হিসেবে তৈরি করবেন, তিনি নিজেই তো প্রতারক।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ ও সরকারের নাম ব্যবহার করে নানান অপরাধ ও অপকর্ম করে যাচ্ছেন এই মানুষটি। তিনি এমএ স্টাডিজের জাল সনদ ব্যবহার করে ১৮/০৬/২০১২ সালে নড়িয়া থানাধীন ডগ্রী ইসমাইল হোসেন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ এর প্রধান শিক্ষক থেকে অধ্যক্ষ পদে পদন্নতি লাভ করেন। যা সম্পূর্ণ রুপেই প্রতারণার সামিল। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এই সনদের সত্যতা নিয়ে কাজ শুরু করে। ইউজিসির তদন্তে প্রমাণিত দেলোয়ার তালুকদারের এমএ সার্টিফিকেট ভুয়া। এই বিষয়ে ডগ্রী ইসমাইল হোসেন স্কুল এ্যান্ড কলেজের একজন শিক্ষক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন অসৎ একজন মানুষ একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান। জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হওয়ায় কোন প্রতিবাদ করা যায়না। এক সময় জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন দেলোয়ার তালুকদার। নানান অপরাধ আর অপকর্মের খবরে সব শেষ জেলা কাউন্সিলে সাংগঠনিক সম্পাদকের দলীয় পদ হারান তিনি। ২০১৬ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েও পরাজিত হয়েছেন। যেখানে শরীয়তপুর ২ আসনের জাতীয় নির্বাচনে কোনদিন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী পরাজিত হয়নি।
এমন বিতর্কিত একজন ব্যক্তি কীভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান এই তা জানা নেই জেলা শিক্ষা অফিসারের। শরীয়তপুর জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ এমারত হোসেন মিয়া বলেন, এই ঘটনা তাঁর জানা নেই। সনদপত্র জাল কিনা তদন্ত করে খতিয়ে দেখবেন।
শরীয়তপুর জেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি আনোয়ার কামাল বলছেন, এটা চরম লজ্জানজক ঘটনা হবে। শিক্ষকরা সমাজের আলোর মশাল নিয়ে এগিয়ে চলেন। তারাই যদি জাল সার্টিফিকেট দিয়ে শিক্ষকতা করেন তাহলে নৈতিক জায়গা বলতে কিছুই থাকে না। তারা শিক্ষার্থীদের কি শিক্ষা দিবেন এই প্রশ্ন খোদ জেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতির।
দেলোয়ার তালুকদার জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। সার্টিফিকেট প্রতারণায় জড়িত ব্যক্তি দলীয় পদে কীভাবে আছেন জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছাবেদুর রহমান খোকা শিকদার বলেন, অভিযোগ প্রমাণ পেলে দলীয়ভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এই জাল সার্টিফিকেট কীভাবে পেলেন, কীভাবে চাকরি করছেন এই প্রশ্নের উত্তরে অভিযুক্ত শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, সকল অভিযোগ মিথ্যা।




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top