সমকালে প্রতিবেদন প্রকাশ

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সহায়তার হাত বাড়ালেন জেলা প্রশাসক

জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে রাজ্জাকের পরিবারের হাতে আর্থিক অনুদান তুলে দেওয়া হয় -

রাজধানীর নিউ সুপারমার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অনেকের সঙ্গে নিঃস্ব হয়েছেন ‘এমআর বুটিকস’-এর কর্ণধার আবদুর রাজ্জাক। তাঁর তিন বছর সাত মাস বয়সী ছেলে আবদুল্লাহ আল ইসমাইলের একটি কিডনি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল অনেক আগেই। আরেকটি কিডনিসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত ছোট্ট শিশুটি। আগুনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়ে পথে বসা রাজ্জাক ছেলের চিকিৎসা খরচ কীভাবে জোগাড় করবেন– তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় হতভাগ্য রাজ্জাকের পরিবার।
১৬ এপ্রিল সমকালের প্রথম পাতায় ‘সঙ্গে পুড়ল ছেলের কিডনি বাঁচানোর আশা’ শিরোনামে মর্মস্পর্শী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। মানবিক ওই প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আসে। এরপর প্রধানমন্ত্রী তাঁর কার্যালয়ের মাধ্যমে ইসমাইলের পাশে দাঁড়াতে ঢাকা জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশনার আলোকে রোববার দুপুরে ঢাকা জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজ্জাকের পরিবারের হাতে আর্থিক অনুদান তুলে দেওয়া হয়েছে। এ সময় সেখানে হৃদয়বিদারক পরিবেশ তৈরি হয়।

ঢাকা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানের কাছ থেকে অনুদানের দুই লাখ টাকা পেয়ে রাজ্জাকের বৃদ্ধ মা মোছা. মীরার কণ্ঠ আবেগে ভারী হয়ে উঠল। মীরা বললেন, ‘দুঃসময়ে নাতির চিকিৎসার জন্য যে আর্থিক সহায়তা পেলাম, এটা আমাদের পরিবারের জন্য অনেক বড় পাওয়া। এই টাকা অনেক উপকারেও আসবে। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। প্রধানমন্ত্রী, জেলা প্রশাসক ও সমকালের প্রতি কৃতজ্ঞতা।’

এ সময় ঢাকা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, দৈনিক সমকাল অত্যন্ত মানবিক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনটি প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর কার্যালয়ের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জেলা প্রশাসনকে দায়িত্ব দিয়েছেন পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর।

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, গণমাধ্যমে প্রকাশিত ইতিবাচক প্রতিবেদনে মানুষ কম আকর্ষিত হয়। নেতিবাচক প্রতিবেদন বেশি গ্রহণ করে। তবে আবদুর রাজ্জাককে নিয়ে সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনের মতো মানবিক রিপোর্ট আরও উঠে আসুক। আমরা চাই সমাজের উন্নয়ন। সমাজের যেখানে সংশোধন প্রয়োজন, মানবিকতার যে ইস্যুগুলো তুলে ধরা দরকার, বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে– সেগুলো আরও বেশি বেশি প্রকাশ করার দায়িত্ব গণমাধ্যমের।

রাজ্জাকের ছেলে আবদুল্লাহ আল ইসমাইলের সুস্থতা কামনা করে তিনি বলেন, রাজ্জাকের শিশুসন্তান দ্রুত সুস্থ হয়ে অন্য সব স্বাভাবিক শিশুর মতো বেড়ে উঠুক– এ প্রত্যাশা করছি। তাঁর পরিবারের পাশে আছি। পরে প্রয়োজনে আরও সহযোগিতা করা হবে। বঙ্গবাজার ও নিউ সুপারমার্কেটসহ সম্প্রতি বিভিন্ন বড় অগ্নিকাণ্ডে যাঁরা একেবারে নিঃস্ব হয়েছেন, যাঁদের চলার কোনো প্রকার উপায় নেই– তাঁদের বিষয়টি গণমাধ্যমে উঠে এলে আর্তমানবতার সেবায় জেলা প্রশাসন পাশে থাকবে বলেও জানান।

রাজ্জাকের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী, তাঁর কার্যালয় এবং ঢাকা জেলা প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন সমকাল সম্পাদক মোজাম্মেল হোসেন। তিনি বলেন, প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে আসার পর রাজ্জাকের পরিবারের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর কার্যালয়– এ জন্য ধন্যবাদ জানাই। প্রশাসন ও নাগরিকের পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এ ধরনের উদ্যোগ অত্যন্ত মূল্যবান। সংবাদপত্রের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য সাধারণ মানুষ। সাংবাদিকতার কার্যক্রমের মাধ্যমে যদি সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়, তাতে আমরা তৃপ্তি পাই; আনন্দিত হই। সাধারণ মানুষের উপকারে আসে– এ ধরনের তথ্য মাঠ পর্যায় থেকে তুলে এনে প্রকাশিত করার আশ্বাস দেন তিনি। গণমাধ্যমের সঙ্গে প্রশাসন ও সরকারের দেশের সাধারণ মানুষের উপকারের জন্য এই পারস্পরিক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন সমকাল সম্পাদক।

রাজ্জাক তাঁর ছেলেকে নিয়ে চেন্নাইয়ের একটি হাসপাতালে রয়েছেন। তাঁর ভাই মো. সজীব প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ও জেলা প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা। সমকালে এ ঘটনা তুলে ধরা না হলে হয়তো আমাদের দুঃখের কথা কেউ জানত না। আর্থিক সহায়তা নিয়ে প্রশাসন আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে।’

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সমকালের সহযোগী সম্পাদক লোটন একরাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মমতাজ বেগম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কাজী হাফিজুল আমিন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ কে এম হেদায়েতুল ইসলাম, সিনিয়র সহকারী কমিশনার মামনুন আহমেদ অনীক, সহকারী কমিশনার শফিকুল ইসলাম, লালবাগ সার্কেলের এসিল্যান্ড আল মামুন প্রমুখ।




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top