জোড়া লাগানো শিশু লাবিবা-লামিসার সফল অস্ত্রোপচার

জোড়া লাগানো শিশু লাবিবা-লামিসার সফল অস্ত্রোপচার

জন্মের পর থেকে জোড়া লাগা দুই বোন লাবিবা-লামিসার পৃথকীকরণ অস্ত্রোপচারটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার সকাল ৯টায় শুরু হয়ে এ অপারেশন শেষ হয় রাত সাড়ে ৮টায়। ১১ ঘণ্টাব্যাপী এ জটিল অস্ত্রোপচারে অংশ নেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩৮ জন চিকিৎসক।

ঢামেকের শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আশরাফুল উল হক কাজল জানান, লাবিবা-লামিসাকে আজ সকাল ৮টার দিকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। এরপর সকাল ৯টায় তাদের অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া হয়। আজ আমরা তাদের সফল অস্ত্রোপচার করেছি। অপারেশনটিকে আমরা সফল বলছি কারণ, অপারেশনের পর লাবিবা-লামিসা পা নাড়াতে পেরেছে। যদি তারা পা নাড়াতে ব্যর্থ হত তাহলে আমরা এটিতে সফল বলতে পারতাম না। চারটি বিভাগের সমন্বয়ে অস্ত্রোপচারটি করতে সক্ষম হয়েছি। এখন তারা ভালো আছে।

তিনি আরও বলেন, মজার ব্যাপার হলো জ্ঞান ফেরার পর পর লাবিবা বলে, 'ও কোথায়'?। আপনারা জানেন, জন্মের পর থেকে তারা জোড়া লাগানো অবস্থায় ছিল। তাই লামিসাকে দেখতে না পেয়ে এ কথা বলে। আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম তাদের আইসিইউ লাগতে পারে। যেহেতু জ্ঞান ফেরার পর তারা পা নাড়াতে পেরেছে সেহেতু তাদের আর আইসিইউ লাগছে না। এখন আমরা তাদের অবজারভেশনে রেখেছি। যেহেতু লাবিবা-লামিসা যোনিপথ ও মলদ্বার একসঙ্গে জোড়া লাগানো ছিল সেটা আমরা আলাদা করেছি। তবে লামিসার যোনিপথ ও মলদ্বারে কিছু সমস্যা রয়েছে পরবর্তীতে আমরা সার্জারি করে এগুলো স্বাভাবিক করে দেব।

তিনি বলেন, চারটি বিভাগের সমন্বয়ে আমরা সফলভাবে অস্ত্রোপচার করতে পেরেছি। অ্যানেসথেসিয়া, পেডিয়াট্রিক সার্জারি, প্লাস্টিক সার্জারি ও নিউরো সার্জারি বিভাগের অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা এ অপারেশনে অংশ নেন।

অ্যানেসথেসিয়া টিমে ছিলেন; অধ্যাপক ডা. সুব্রত কুমার, সহযোগী অধ্যাপক ডা. মুসলেমা বেগম, ডা.এম এ কাসেম, ড.মলয়, ডা. রেজাউল করিম, ডা.শিফা, ড.ওমর, ডা. সম্পদ ও কনসালটেন্ট ডা. আরিফ উদ্দিন।

পেডিয়াট্রিক সার্জারি টিমে ছিলেন; অধ্যাপক ডা. আশরাফুল উল হক কাজল, অধ্যাপক ডা. ছদরুল আলম, অধ্যাপক ডা সামিদুর রহমান, অধ্যাপক ডা শাহানুর ইসলাম,সহযোগী অধ্যাপক ডা তাহমিনা হোসেন,সহযোগী অধ্যাপক ডা মইনুল হক, সহকারী অধ্যাপক ডা বিপুল ভূষণ দাস, কনসালটেন্ট ডা. অমিতাভ বিশ্বাস, ডা মো আসিফ ইকবাল, ডা মো জিয়াউল হক জিয়া, ডা. নিয়াজ আনাম নীলাভ, ডা. মিথিলা, ডা. নাঈম, ডা. বিভাস ও ডা. রাশেদ।

প্লাস্টিক সার্জারি টিমে ছিলেন; অধ্যাপক ডা. নওশেজ আলী খান, অধ্যাপক ডা. আইয়ুব আলী, সহযোগী অধ্যাপক ডা. বিধান সরকার, সহযোগী অধ্যাপক ডা. তাহমিনা সত্তার শিমু ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. প্রদীপ চন্দ্র দাস।

নিউরো সার্জারি টিমে ছিলেন; অধ্যাপক ডা. অসিত চন্দ্র সরকার, সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফজলে এলাহী মিলাদ, সহযোগী অধ্যাপক ডা রফিকুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক ডা. কানিজ ফাতেমা ইশরাত জাহান রিফাত, ডা. মো. সাইফুল হক, ডা. ইসমি আজম জিকো, ডা. রাশেদুল হাসান, ডা. শাহনেওয়াজ, ডা. সালেহউদ্দিন ও ডা. তানভীর।

উল্লেখ্য, গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর প্রথম ধাপের অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয় এ দুই শিশুর। তখন মূল ধাপের অপারেশন শুরু করলে শিশু দুটিকে বিচ্ছিন্ন করার পর লামিসার কিছু জটিলতার আশঙ্কা ছিল। সে ক্ষেত্রে নারী হিসেবে তার পূর্ণতা পেতে সমস্যা হতো।

প্রথম ধাপের অস্ত্রোপচারের পর যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল

শিশু লাবিবা-লামিসার শরীরে পর্যাপ্ত টিস্যু না থাকায় চামড়ার নিচে দুটি সিলিকন বল স্থাপন করা হয়েছিল। ওই সময় চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, এই জায়গায় প্রতি সপ্তাহে ৫০-১০০ এমএল স্যালাইন পুশ করা হবে। অর্থাৎ, একটি শরীরে টিউমার যেরকম বাড়তে থাকে সিলিকন বল দুটিও টিউমারের মতো বড় হতে থাকবে। এরপর আমরা ৪-৬ সপ্তাহ সময় নেব। এতে চামড়া ও টিস্যু অনেক বড় হবে। তখন তাদের আলাদা করার পর এখান থেকে টিস্যু ও চামড়া নিয়ে কাভার করা হবে।

লাবিবা-লামিসার পরিচয়

লাবিবা ও লামিসার বয়স প্রায় তিন বছর। ২০১৯ সালের ১৫ এপ্রিল তাদের জন্ম হয়। বাড়ি নীলফামারী জেলায়। তাদের বাবা দিনমজুর। জন্মগতভাবে তারা জোড়া লাগানো। তাদের দুজনের মলদ্বার একটি। এর আগে সার্জারির মাধ্যমে পৃথক মলদ্বার তৈরি করা হয়। ঢামেক হাসপাতাল বিনামূল্যে এ দুই শিশুর চিকিৎসা করছে।




আপনার মূল্যবান মতামত দিন:


Top